কৃত্রিম পায়ে স্বপ্নের পানে ছুটছেন লিমন

লিমন হোসেন l ফাইল ছবি
লিমন হোসেন l ফাইল ছবি

এক পা নেই। চলাফেরায় কষ্ট হয়। তবু দমে যাওয়ার পাত্র নন। কৃত্রিম পায়ে ভর করে ধীরে ধীরে স্বপ্ন পূরণের পানে এগিয়ে যাচ্ছেন র্যা বের গুলিতে পা হারানো লিমন। ঝালকাঠির মেধাবী শিক্ষার্থী লিমনের র্যা বের গুলিতে পঙ্গু হওয়ার ছয় বছর পূর্তি হয়েছে গতকাল ২৩ মার্চ।
২০১১ সালের ২৩ মার্চ বিকেলে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার জমাদ্দারহাটে র্যা বের অভিযানের সময় লিমন হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। তিনি জানান, র্যা ব সদস্যরা তাঁকে ধরে নিয়ে পায়ে গুলি করেন। এর কয়েক দিন পর ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁর বাঁ পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন।
উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার মাত্র ১২ দিন আগে এ ঘটনা ঘটে। তখন লিমনের বয়স ছিল ১৬ বছর। সে বছর আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তবে দমে যাননি দরিদ্র পরিবারের সন্তান লিমন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পড়াশোনা করে পরের বছর পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কাঁঠালিয়া পিজিএস বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪ পান তিনি। এরপর ভর্তি হন সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন আইন বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের ছাত্র তিনি।
গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘লিমন শ্রেণিকক্ষে এবং পড়াশোনায় নিয়মিত। আমরা তাঁর মধ্যে প্রবল ইচ্ছাশক্তি দেখেছি।’
লিমন প্রথম আলোকে বলেন, আগামী ২০ এপ্রিল ফাইনাল পরীক্ষা। এরপরও পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে চান। তাঁর ইচ্ছা, আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করবেন। তিনি বলেন, ‘নিজের পায়ে ভর করে দাঁড়াতে চাই। সবার সহযোগিতায় সেই লক্ষ্যে আমি এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করছি। এ জন্য গণমাধ্যম, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মানবাধিকার কমিশন, গণবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তারা আমার অধিকার প্রতিষ্ঠায় নানাভাবে সহযোগিতা করেছে।’
চার বছর ধরে ঝুলছে হত্যাচেষ্টা মামলা
লিমনকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল তার মা হেনোয়ারা বেগম র্যা বের ছয় সদস্যকে আসামি করে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও রাজাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হালিম তালুকদার আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। ওই বছরের ৩০ আগস্ট চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন হেনোয়ারা। পরের বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালত নারাজি আবেদনটি খারিজ করে দেন। একই বছরের ১৯ মার্চ বিচারিক হাকিমের ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য ঝালকাঠি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন আবেদন করেন লিমনের মা। চার বছর পেরিয়ে গেলেও ওই পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর এখনো শুনানি হয়নি।
হেনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার বছর ধরে কেবল তারিখ পড়ে, কিন্তু শুনানি হচ্ছে না। কবে হবে আর কবে বিচার পাব তাও অনিশ্চিত।’
ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি এম আলম খান কামাল বলেন, মামলাটি শিগগিরই শুনানির জন্য আদালতে উঠবে।