কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালে নানা সমস্যা
কেরানীগঞ্জের শেখ মো. আলী হোসেনের পোলট্রি ফার্ম আছে। অজ্ঞাত রোগে তাঁর মুরগি মারা যাচ্ছে। তাই পরামর্শের জন্য এসেছেন ঢাকায় কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালে। ইতিমধ্যে হাসপাতাল থেকে মরা মুরগি কাঁটাছেঁড়া করে রোগ নির্ণয় করা হয়েছে। এখন ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন তিনি। বললেন, ‘এই নিয়ে তিনবার আসছি। এইখানের ডাক্তাররা অনেক সময় নিয়া সমস্যা শোনেন। আর চিকিৎসাও ফ্রি।’
কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক পশুপাখি বিনা মূল্যে সেবা পাচ্ছে। প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারও হচ্ছে বিনা মূল্যে। তবে হাসপাতালের কোনো অন্তর্বিভাগ নেই। নেই প্রয়োজনীয় ওষুধের পর্যাপ্ত বরাদ্দ।
ফুলবাড়িয়ার ৪৮ কাজী আলাউদ্দিন রোডে অবস্থিত কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয় ১৯২০ সালে। বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার ইমরান হোসেন খান বলেন, ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ মূলত ঘোড়ার চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১৯১৮ সালে ৩ দশমিক ৪ একরের এই জমিটি দান করেন।
বর্তমানে এ হাসপাতালে সব ধরনের গবাদি ও গৃহপালিত পশুপাখির চিকিৎসা হয়। ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার পাশাপাশি টিউমার অপসারণ, কুকুর-বিড়ালের বন্ধ্যাকরণ, বিড়ালের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসবের সেবাও দেওয়া হয়। ১০ জন পশুচিকিৎসক সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সেবা দিয়ে থাকেন। শুক্রবার দুপুর ১২টা ও শনিবার বেলা ২টা পর্যন্ত হাসপাতাল খোলা থাকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে এখানে ৩২টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। আর সেবা পেয়েছে প্রায় ৩০ হাজার পশুপাখি। চিফ ভেটেরিনারি অফিসার আবদুল হালিম বলেন ‘একসময় লার্জ অ্যানিমেল ও পোলট্রির চিকিৎসা বেশি দেওয়া হতো। এখন শখের পোষা প্রাণী নিয়ে মানুষ বেশি আসে।’
গত শুক্র ও রোববার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় ভেড়া, বাছুর, পাখি, বিড়াল, কুকুরের জন্য চিকিৎসাসেবা নিতে ঢাকার নানা প্রান্ত থেকে লোকজন এসেছেন। ভেটেরিনারি অফিসারদের কক্ষের সামনে বসে-দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন তাঁরা। একে একে ভেতরে ডাক পড়ছে। অপেক্ষমাণদের একজন শরিফুল ইসলাম বললেন, এখানের চিকিৎসাব্যবস্থা ভালো। ডাক্তারের ভিজিট দিতে হয় না। তবে ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়।
শুক্রবার অসুস্থ বিড়াল নিয়ে মিরপুর থেকে এসেছিলেন একজন। বিড়ালের অস্ত্রপোচারের পর তখনই খাঁচায় করে সেটি নিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। বললেন, ‘এখানে রাখার ব্যবস্থা নাই। তাই নিয়ে যাচ্ছি।’
অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে নির্মিত সম্প্রসারিত ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সিলিং থেকে পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তা আবদুল হালিমও তাঁদের সীমাবদ্ধতাগুলোর কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, মানুষের মতো পশুপাখিরও অস্ত্রোপচার-পরবর্তী বিশেষ যত্ন দরকার, যা তাঁরা দিতে পারছেন না। তাঁদের ওষুধের বরাদ্দও প্রয়োজনের তুলনায় কম। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ভালো সেবা দিতে চেষ্টা করছেন তাঁরা।