কেয়ার মুখে হাসি, চোখে স্বপ্নের ঝিলিক

কেয়ার মুখে হাসি, চোখে স্বপ্নের ঝিলিক। ছবিটি মুম্বাইয়ে তোলা। ছবি: সংগৃহীত
কেয়ার মুখে হাসি, চোখে স্বপ্নের ঝিলিক। ছবিটি মুম্বাইয়ে তোলা। ছবি: সংগৃহীত

কেয়ার মুখে হাসি ফুটেছে। একটু একটু করে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাও শুরু করেছে কেয়া। স্বামী পারভেজ খানকে বলেছে, ‘তোমার কি মনে হয় আমি সারাজীবন বাপের বাড়ি থাকব? আরে, আমি তো শ্বশুর বাড়ি যাব।’
আজ রোববার সন্ধ্যায় পারভেজ খান প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। তখন পারভেজের চোখেও ছিল স্বপ্নের ঝিলিক। স্ত্রী কেয়া খাতুনকে ভারতের মুম্বাই রেখে এসেছেন। ওখানকার টাটা মেমোরিয়াল ক্যানসার হাসপাতালে কেয়ার চিকিৎসা চলছে। সঙ্গে আছে কেয়ার বড় ভাই।
পারভেজ বাংলাদেশে এসেছেন ৩৫ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা দিতে। তেমনভাবে পড়াশোনা করতে না পারলেও পরীক্ষা ভালোই হয়েছে বলে জানালেন পারভেজ। কেয়াকে দেখভালের জন্য পারভেজ তাঁর খালাকে নিয়ে যেতে এসেছেন। দুই একদিনের মধ্যেই তাঁরা চলে যাবেন।
গত ২৯ জুলাই শরীরে ব্লাড ক্যানসার (এএমএল) বাসা বাঁধা কেয়াকে নিয়ে পারভেজ ভারতের উদ্দেশে রওনা দেন। মুম্বাইতে একটি বাসা ভাড়া নিয়েছেন। বাসায় থেকেই হাসপাতালে যাওয়া আসার মাধ্যমে চলছে চিকিৎসা। এ পর্যন্ত সেখানে থাকা, কেয়ার দুইটি কেমোথেরাপির পেছনে খরচ হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কেয়া ও পারভেজের বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা কেয়ার চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে পোস্ট দেন। এরপর প্রথম আলো অনলাইনে কেয়াকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কেয়ার সাহায্যের জন্য পাওয়া গেছে প্রায় ৩২ লাখ টাকা। যাঁরা কেয়ার পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁদের প্রতি একাধিকবার কৃতজ্ঞতা জানালেন পারভেজ।
পারভেজ জানালেন, আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর কেয়াকে কেমোথেরাপি দেওয়া হবে। তারপর তাঁরা দেশে আসতে পারবেন। দেশে আসার পর নির্দিষ্ট সময় পর্যবেক্ষণে থাকার পর চিকিৎসকেরা তাঁর বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা যাবে কি যাবে না তার সিদ্ধান্ত জানাবেন। কেয়ার সেল (কোষ) তাঁর এক বোনের সঙ্গে মিলেছে।
পারভেজের চোখে আবারও খুশির ঝিলিক। তিনি জানালেন, দেশে আসতে পারার খবরে সব থেকে বেশি খুশি হয়েছেন কেয়া। কেয়া আবার যে দেশে আসতে পারবে তা চিন্তাই করতে পারতেন না। এখন একটু একটু করে শরীরটা ভালো হচ্ছে, আর মনে সাহস পাচ্ছেন।

জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখ ঘরোয়াভাবে বিয়ে হয় এ দম্পতির। একটু গুছিয়ে নিয়ে সবাইকে বিয়ের কথা ঘটা করে জানানোর কথা ছিল। তাই বিয়ে হলেও কেয়ার বউ সেজে শ্বশুর বাড়ি যাওয়া হয়নি। তবে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আগেই বিয়ের পাঁচ মাস যেতে না যেতেই কেয়াকে যেতে হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত ৮ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে ভর্তি হন কেয়া।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি অ্যান্ড বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এম এ খানের পরামর্শে কেয়ার বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের জন্য তাঁকে ভারতে নেওয়া হয়েছে।
পারভেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ (অ্যাকাউন্টিং) করে বের হয়েছেন গত নভেম্বরে। ২২ বছর বয়সী কেয়া খাতুন রাজবাড়ী সরকারি কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন। তাঁদের পছন্দের বিয়ে। দুজনের বাড়ি রাজবাড়ী সদরে।
খরচের প্রসঙ্গ এলে পারভেজের চোখ থেকে খুশির ঝিলিকটি মিলিয়ে গেল। তিনি জানালেন, মুম্বাইয়ের চিকিৎসকেরা কেয়ার বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের সিদ্ধান্ত নিলে শুধু হাসপাতালেই দিতে হবে ২৫ লাখ রুপি। সেখানে থাকাসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই।
বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা হলেও বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। কেয়ার মা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। তবে পারভেজ নিজেই জানালেন, ‘আগে কেয়া ভালো হোক। আমাদের সন্তান না হলেও চলবে।’
বাংলাদেশে একটি কেমোথেরাপি দেওয়ার সময়ই কেয়ার মাথার চুল পড়তে শুরু করে। কেয়ার চুল সম্পর্কে জানতে চাইলে পারভেজের মুখে হাসির রেখাটা দ্বিগুণ হলো। বললেন, ‘ওর চুল আগে থেকেই পাতলা ছিল। ও যখন মাথায় কাপড় দিয়ে রাখে দেখতে খুব ভালো লাগে। মাথায় চুল না থাকলেও সমস্যা নাই।’
পারভেজ পরিবারের বড় ছেলে। অন্য ভাই বোনেরা তাঁর একটি ভালো চাকরি পাওয়ার আশায় বসে আছে। এর মধ্যে অনেকগুলো ভালো চাকরির ইন্টারভিউ এর তারিখ ছিল। এখন যত তাড়াতাড়ি কেয়া ভালো হবে ততই এই দম্পতির স্বপ্নগুলো দ্রুত ডালপালা মেলতে পারবে।
পারভেজ ও কেয়ার স্বপ্ন পূরণে আপনি বাড়িয়ে দিতে পারেন সাহায্যের হাত। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: বিকাশ নম্বর (নিজস্ব) ০১৭২৬৪৮০৯৯৮,০১৭১৯৬২৬৪৫৮, ০১৯৪৮১০৪০৪৪। ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং ০১৭৩৫২৪৫৪৯৪০ অথবা ডাচ বাংলা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (এলিফ্যান্ট রোড শাখা) ১২৬১০১২২১২০০ তেও সাহায্য পাঠানো যাবে। এ ছাড়া সুইফট কোড-DBBL-BDDH-126 সাহায্য করা যাবে।