কে হবেন প্রধান অতিথি?

স্থানীয় সাংসদ, না প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা—কে হবেন বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের (পি সি রায়) জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি? ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির পদ ঠিক করতেই রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে জেলা প্রশাসনকে।

জেলা প্রশাসন থেকে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমানকে প্রধান অতিথি করার পক্ষে মত থাকলেও আওয়ামী লীগের একটি অংশ চাইছে প্রধান অতিথি হবেন স্থানীয় সাংসদ শেখ মো. নূরুল হক।

খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় পি সি রায়ের বাড়ি। সেখানে প্রতিবছর ২ আগস্ট তাঁর জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। এবারও ওই অনুষ্ঠান পালনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জটিলতা তৈরি হয়েছে প্রধান অতিথি করা নিয়ে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মসিউর রহমানকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল জেলা প্রশাসন থেকে। তিনিও অনুষ্ঠানে থাকতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সাংসদের আপত্তির কারণে বিষয়টি ঝুলে আছে।

জানা গেছে, সাংসদ নূরুল হক কয়েক বছর ধরে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকেন। কিন্তু এ বছর ওই অনুষ্ঠানে মসিউর রহমানকে প্রধান অতিথি হিসেবে রাখার পক্ষে জেলা প্রশাসন। সমস্যা হচ্ছে, মসিউর রহমান ওই সংসদীয় আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ কারণে সাংসদের অনুসারীরা প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর থাকাটা ভালো চোখে দেখছেন না। ইতিমধ্যে পাইকগাছা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল, সভা, সমাবেশও করেছেন তাঁরা।

পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের ওই অংশের দাবি, যেহেতু নূরুল হককে এত বছর প্রধান অতিথি করা হয়েছে, সেখানে নির্বাচনে নতুন প্রার্থী হতে আগ্রহী কাউকে প্রধান অতিথি করা হলে সেটা সাংসদের জন্য হবে অপমানের। তা ছাড়া মসিউর রহমানের বাড়ি পাইকগাছায় নয়, দিঘলিয়া উপজেলায়। তবে শ্বশুরবাড়ি পাইকগাছা উপজেলায় হওয়ায় তিনি সেখানে মাঝেমধ্যে যেতেন। তবে কখনো রাজনীতিতে বা ওই এলাকার উন্নয়নে সক্রিয় ছিলেন না। এ কারণে নিজের এলাকা ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় তাঁর সংসদ নির্বাচন করাটাকে অনেকে ভালো চোখে দেখছেন না। এ কারণে মসিউর রহমানকে পি সি রায়ের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করার সিদ্ধান্তে তাঁরা ক্ষুব্ধ। মসিউর রহমান ছাড়া যে কাউকে প্রধান অতিথি করলে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই।

তবে সাংসদের বিরোধী পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ ভাবছে, মসিউর রহমান সাংসদ হলে ওই এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। কারণ, তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই পি সি রায়ের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁরই থাকা উচিত। তবে তাঁরা মসিউর রহমানের পক্ষে কোনো সভা, সমাবেশ বা মিছিল করেননি।

জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং মসিউর রহমানকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা হচ্ছিল অনুষ্ঠান আরও সুন্দর করার জন্য। মসিউর রহমান মন্ত্রী পদমর্যাদার খুলনার একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁকে প্রধান অতিথি করা হলে অনুষ্ঠান আরও বেশি অলংকৃত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমানে খুলনা জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করার জন্য এখনো কাউকে চূড়ান্ত করা হয়নি। জেলা প্রশাসক ডিসি সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় রয়েছেন। তাঁকে ঘটনাগুলো জানানো হয়েছে। তিনি আসার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।