কে হলেন সেরা চা-ওয়ালা!

সেরা চা-ওয়ালার পুরস্কার নিচ্ছেন আবদুল ওহাব। ছবি: দিলীপ মোদক।
সেরা চা-ওয়ালার পুরস্কার নিচ্ছেন আবদুল ওহাব। ছবি: দিলীপ মোদক।

প্রতিযোগিতা চলছে। আছেন ১০ বিচারক। তাঁদের দিকে কাপ ভর্তি চা এগিয়ে দিলেন কয়েকজন চা-ওয়ালা। বিচারকেরা চায়ে চুমুক দিলেন। পরস্পরের সঙ্গে আলাপ করলেন। কিছুক্ষণ পর বিচারকেরা রায় দিলেন, ওর চা-ই সেরা। পরে বিচারকেরা সেরা চা-ওয়ালার হাতে তুলে দিলেন ২১ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন।

আসলে প্রতিযোগিতাটাই হয়েছে চা-ওয়ালাদের তৈরি করা চায়ের স্বাদ নিয়ে। আজ শুক্রবার বৈশাখী মেলা উপলক্ষে যশোরের কেশবপুর পাবলিক ময়দানে ব্যতিক্রমী এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতার পুরোটাজুড়েই ছিল প্রবল আগ্রহ, করতালি আর হইহুল্লোড়। সেরা চা-ওয়ালা হয়েছেন উপজেলার ত্রিমোহিনী মোড়ের চা বিক্রেতা আবদুল ওহাব। চা খাইয়ে টেলিভিশন জিতে তাঁর চোখেমুখে বিজয়ীর হাসি।
কেশবপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ বিকেল পাঁচটার দিকে এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫ জন চা বিক্রেতা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে গরম পানি, দুধ, চিনি ও চা–পাতা সরবরাহ করা হয়। উন্মুক্ত মাঠে উত্তপ্ত পানি এবং দুধ ফোটানো হয়। আর তা দিয়ে প্রতিযোগীরা মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে চা বানিয়ে ১০ জন বিচারককে চা সরবরাহ করেন। এভাবে প্রতিযোগিতাটি সম্পন্ন হয় ।
বিপুলসংখ্যক দর্শক এ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। এঁদের মধ্যে নারীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। এ ব্যতিক্রমী আয়োজনে কেশবপুর শহরের বকুলতলা এলাকার চা দোকানি জ্যোতি আক্তারও অংশ নেন। তিনি ছিলেন একমাত্র নারী প্রতিযোগী ।

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় বৈশাখী মেলা উপলক্ষে চা প্রতিযোগিতায় চা তৈরি করছেন প্রতিযোগী জ্যোতি আক্তার। ছবি: দিলীপ মোদক।
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় বৈশাখী মেলা উপলক্ষে চা প্রতিযোগিতায় চা তৈরি করছেন প্রতিযোগী জ্যোতি আক্তার। ছবি: দিলীপ মোদক।

প্রতিযোগিতার আগে জ্যোতি বলেন, ‘সাত-আট বছর ধরে চা বানাই। এমন প্রতিযোগিতায় এসে আমার অনেক ভালো লাগছে । প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাব কি না জানি না, তবে আমাদের মতো চা দোকানিদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে, এটা অনেক ভালো।’
১০ কিলোমিটার দূর থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা সাতবাড়িয়া বাজারের চা দোকানি ইমদাদুল মোড়ল বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছি। আগে কখনো এমন প্রতিযোগিতায় অংশ নিইনি।’
দর্শকদের মধ্য থেকে প্রতিক্রিয়া জানান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, ‘চা আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। যাঁরা চা বিক্রি করেন, এমন আয়োজনে তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়াটা ব্যতিক্রম।’
বিচারকদের মধ্যে শিক্ষক, চিকিৎসক, গৃহিণী, কৃষক ও সাংবাদিক ছিলেন। কৃষক আবদুল গাজী বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরেই চা খাই। তবে কখনো চা প্রতিযোগিতার বিচারক হব ভাবিনি। এমন আয়োজনে বিচারক হতে পেরে আমি খুশি।’
গৃহিণী তানজিলা পিয়াস বলেন, ‘এমন প্রতিযোগিতা আগে কখনো হয়নি। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তার পেশার প্রতি আরও আগ্রহী হবে।’
এই প্রতিযোগিতার অন্যতম আয়োজক কেশবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ রায়হান কবির বলেন, ‘প্রতিটি পেশায় অনেক মেধাবী মানুষ আছেন। তাঁদের ভেতরে অনেক শৈল্পিক বোধও আছে। তাঁদের পেশাকে সম্মান জানানো আমাদের কর্তব্য। সেই ধারণা থেকে এ ব্যতিক্রম আয়োজন করা হয়েছে।’
প্রতিযোগিতা শেষে শহরের ত্রিমোহিনী মোড়ের চা বিক্রেতা আবদুল ওহাব সেরা চা-ওয়ালা নির্বাচিত হন। তাঁকে পুরস্কার হিসেবে ২১ ইঞ্চি একটি রঙিন টেলিভিশন দেওয়া হয়। এ ছাড়া সব প্রতিযোগীকে সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে ছয়টি চায়ের কাপ দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় উপস্থিত কেশবপুর পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম সেরা চা–ওয়ালাকে একটি সাইন বোর্ড এবং চায়ের দোকানের সরঞ্জামাদি দিয়ে দোকান সাজিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।