চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়র এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে বাংলা রচনামূলক প্রশ্নের ৮৬টি উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় স্থানীয় কোরক বিদ্যাপীঠের কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষক-অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও পুলিশ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া যায়।
জানা গেছে, বিদ্যালয়টি দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বোর্ডের স্বীকৃতি ছাড়াই পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি নিয়মবহির্ভূতভাবেই ৬৪ বছর বয়সেও এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাঁর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ৬০ বছরের বেশি চাকরি করার সুযোগ নেই।
কোরক বিদ্যাপীঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি বশিরুল আলম ওই উত্তরপত্র ছেঁড়ার ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বলেন, ‘জড়িত থাকতে পারে। কেউ জড়িত ছিল প্রমাণ হলে আমরা তাদের প্রশ্রয় দেব না।’
বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে নবায়নের জন্য বোর্ডে কাগজপত্র পাঠিয়েছি। এ মাসের শেষ দিকে অথবা আগামী মাসের প্রথম দিকে আমরা নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেব।’
৯ ফেব্রুয়ারি বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা চলাকালে চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে ৪ ও ৬ নম্বর কক্ষে বিলম্বে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র দেওয়াকে কেন্দ্র করে একদল ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থী উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলে। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
এদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল কবীরের বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে গেছে গত ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট। এরপর বোর্ডে আবেদন করে ২০১০ সালে ৮ সেপ্টেম্বর দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়েছেন। এর পরও ২০১২ সালের ৫ আগস্ট আবারও মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানালে বোর্ড মেয়াদ বাড়াতে অপারগতা জানায়।
চট্টগ্রাম বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, ‘আমরা কোরক বিদ্যাপীঠ কর্তৃপক্ষকে স্বীকৃতি নবায়নের জন্য তাগিদ দিয়েছি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়ম অনুযায়ী ৬০ বছরের পরে কোনো প্রধান শিক্ষক তাঁর পদে থাকতে পারেন না।’
স্বীকৃতিবিহীন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের অনুমতি ও বোর্ডের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিধান না থাকলেও মানবিক দিক বিবেচনায় ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।
চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব পালনকারী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অজ্ঞাত ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা করেছি। সংশ্লিষ্ট কক্ষের পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ থেকে জেনেছি, যারা উত্তরপত্র ছিঁড়েছে তাদের অনেকেরই জামার রং ছিল আকাশি। আকাশি রঙের ইউনিফর্ম কোরক বিদ্যাপীঠের। আবার কেউ কেউ ওই মুহূর্তে জামা খুলে ফেলে উত্তরপত্র ছিনিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ পেয়েছি।’
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রঞ্জিত কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘একজন কর্মকর্তাসহ চারজন কনস্টেবল কেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। তাঁদের পক্ষে কেন্দ্রের ৯২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিল না। পরীক্ষা কার্যক্রমে যাতে কোনো ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে সেভাবেই আমরা মামলার কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।’