কৌতূহল মেটাচ্ছেন আগ্রহীরা, চোখের সামনে সমরাস্ত্র

পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সমরাস্ত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে সাত দিন। গতকাল প্রদর্শনী ঘুরে দেখে স্কুলের শিক্ষার্থীরা l ছবি: প্রথম আলো
পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সমরাস্ত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে সাত দিন। গতকাল প্রদর্শনী ঘুরে দেখে স্কুলের শিক্ষার্থীরা l ছবি: প্রথম আলো

এক গুলি এক শত্রু। বন্দুক দিয়ে গুলি ছুড়ে শত্রুরূপী মানুষ আকৃতির বোর্ডে লাগাতে হবে। পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে আসা দর্শনার্থীদের অনেকেই এই কাজে নিজেদের দক্ষতা যাচাই করেছেন।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০১৭ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সমরাস্ত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। সাত দিনের এই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বিভিন্ন ধরনের সমরাস্ত্র জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহৃত সমরাস্ত্র কাছ থেকে দেখতে এবং সেগুলো সম্পর্কে ধারণা পেতে কৌতূহলী লোকজন এসেছেন প্রদর্শনীতে। অনেকে স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছেন।
প্রদর্শনীর বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে সকালে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। তাতে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রতিনিধিরা প্রদর্শনীতে নিজেদের বাহিনীর স্টল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
আজ ২৪ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এবং আগামী ২৬, ২৭ ও ২৯ মার্চ প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ২৯ মার্চ দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সাধারণের সঙ্গে সঙ্গে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রদর্শনীতে সেনাবাহিনীর স্টলে পাশাপাশি দুটি বিশাল সামরিক ট্যাংক রাখা আছে। খানিক দূরেই বিমান ও ট্যাংকবিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় কামান। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত এসব সরঞ্জামের পাশে দাঁড়িয়ে অনেকে ছবি তুলছেন। উৎসুক কেউ কেউ এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পাশে দাঁড়ানো সেনাসদস্যদের প্রশ্ন করছেন। তাঁরাও কৌতূহল মেটাচ্ছেন হাসিমুখে।

সংবাদ সম্মেলনে (বা থেকে) নৌবাহিনীর কমান্ডার এম হুমায়ুন কবীর, সেনাবাহিনীর মেজর সৈয়দ মাসুদুর রহমান, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি কমান্ডার মোহাম্মদ শাহীন মজিদ এবং বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ
সংবাদ সম্মেলনে (বা থেকে) নৌবাহিনীর কমান্ডার এম হুমায়ুন কবীর, সেনাবাহিনীর মেজর সৈয়দ মাসুদুর রহমান, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি কমান্ডার মোহাম্মদ শাহীন মজিদ এবং বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ

মিরপুর থেকে ছেলেমেয়েকে নিয়ে প্রদর্শনীতে এসেছেন সেলিমুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘প্রদর্শনী ছাড়া এসব সমরাস্ত্র কখনো দেখার সুযোগ হতো না। কাছ থেকে দেখতে পারলাম। বাচ্চারা বাস্তবে এসব দেখে অনেক খুশি হয়েছে। বিভিন্ন বাহিনীর লোকজনের সঙ্গে কথা বলে কোনটার কী কাজ, জানতে পারলাম।’
প্রদর্শনীতে মোট ৪৮টি স্টল রয়েছে। সেনাবাহিনীর ৩২টি, নৌবাহিনীর ৬টি, বিমানবাহিনীর ৬টি, স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকাসহ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের ওপর সম্মিলিত ৪টি স্টল রয়েছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ ‘বানৌজা বঙ্গবন্ধু’র আদলে বানানো হয়েছে নৌবাহিনীর স্টল। সামনের কৃত্রিম লেকে মাথা তুলে আছে বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন ‘বিএনএস নবযাত্রা’র রেপ্লিকা। স্টলে আছে পানির নিচে ও ওপরে ব্যবহৃত নৌবাহিনীর বিভিন্ন সামগ্রী, গান ও মিসাইলের মডেল।
প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সদস্যদের নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। খাবার নিয়ে বাছবিচারের সুযোগ থাকে না কমান্ডোদের। প্যারা কমান্ডো স্টলে তাঁদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রীর পাশাপাশি কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার বিভিন্ন কৌশলও দেখানো হয়।
প্রদর্শনীতে বিভিন্ন সমরাস্ত্র ছাড়াও ফ্লাই পাস্ট, প্যারা ড্রপিং, র্যাপেলিং, আন আর্মড কমব্যাট, এয়ার ডিসপ্লে দেখানো হবে। স্যুভেনির স্টল থেকে চাইলে টি-শার্ট, মগ, টুপি, ওয়ালেট কেনা যাবে। প্রদর্শনীতে কোনো ধরনের ব্যাগ বহন না করার জন্য অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস, দেশ ও জাতি গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রম, বাহিনীর আধুনিকায়ন, বাহিনীর ব্যবহৃত সমরাস্ত্র সম্পর্কে জনসাধারণকে ধারণা দেওয়া এবং এই পেশার প্রতি তরুণদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি কমান্ডার মোহাম্মদ শাহীন মজিদ এবং সেনাবাহিনীর মেজর সৈয়দ মাসুদুর রহমান, নৌবাহিনীর কমান্ডার এম হুমায়ুন কবীর এবং বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ স্টলগুলোর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।