ক্ষতিকর কোনো পরামর্শ সরকার গ্রহণ করবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনইসি বৈঠকে বক্তব্য দেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেনঢাকা, ১৮ মে
ছবি: বাসস

অতীতে বিএনপি সরকারের সময় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বাংলাদেশের রেল বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দেশের কোনো ক্ষতি হয় এমন কারও কোনো পরামর্শ গ্রহণ করবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় (অন্যের) পরামর্শেই দেশ চলেছে, কিন্তু আমি এটা করব না। কারণ, দেশটা আমাদের এবং আমরাই ভালো জানি কিসে দেশের এবং জনগণের উন্নতি হবে।’

প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে সভাপতিত্বকালে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে এবং শেরেবাংলা নগরের এনইসি কনফারেন্স রুম, পরিকল্পনা কমিশন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্টরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজের দেশকে নিয়ে ভাবতে হবে। সব সময় খালি পরমুখাপেক্ষী থাকলে হবে না। সেই উৎসাহটা দেবেন আপনারা, সেটাই চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশটা আমাদের, আমরা জানি কীভাবে দেশের উন্নতি করতে হবে। তবে পরামর্শ নেব আমরা। তবে সেই পরামর্শটা এমন হবে না যেটা দেশের জন্য ক্ষতিকর।’

প্রধানমন্ত্রী উদাহরণ দেন, দেশের জন্য রেল কল্যাণমুখী হলেও বিএনপি দাতাগোষ্ঠীর পরামর্শে রেল বন্ধ করে দেওয়ার পুরো বন্দোবস্ত করে ফেলেছিল। কর্মচারী ছাঁটাই, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সবকিছুর ব্যবস্থাই হয়েছিল। কিন্তু আমরা সরকারে এসেই এর জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দসহ রেলকে আলাদা মন্ত্রণালয় করে দিলাম। পৃথক মন্ত্রণালয় করার উদ্দেশ্যই হলো আলাদা বাজেট পাবে এবং আমরা সমগ্র বাংলাদেশে রেল যোগাযোগটা পুনরায় চালু করব। আমরা সেটা চালু করেছি।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘রেল এবং পর্যায়ক্রমে পাবলিক বাস যাতে পাবলিক চলাচল করে তা–ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের একটা পরামর্শে। কিন্তু আমরা সবগুলোই চালু রেখেছি এবং যার সুফলটা দেশের মানুষ পাচ্ছে, এটাই হলো বাস্তবতা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে তখনই, যখন যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট উন্নত হবে। এগুলো না হলে কোনো দেশের উন্নয়ন হতে পারে না। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে আমাদের শুধু সড়কপথের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকলে চলবে না। সড়কপথ, নৌপথ, রেলপথ এবং বিমান—সবই লাগবে আমাদের এবং আমরা সেভাবেই দেশটাকে সাজাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী আগামী ৩ জুন সংসদে বাজেট উত্থাপনের প্রায় সব কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং সরকারি কর্মচারীদের কাজের গতি ও মনোযোগ বৃদ্ধির প্রশংসা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি কর্মচারীদের কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে অতীতের মতো ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ সেই বিষয়টি বর্তমানে নেই। অন্তত সবার কাজের প্রতি একটা আন্তরিকতা আছে, দেশটাকে নিজের মনে করার এবং সেভাবেই কাজটি করার। সেই মানসিকতাটা তৈরি হয়ে গেছে, এটিই হচ্ছে সবচেয়ে আশার ব্যাপার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজকে নিজের মনে করার মানসিকতা এবং আন্তরিকতা না থাকলে নিজে যেমন এগোনো যায় না দেশকেও উন্নত করা যায় না। তিনি বলেন, ‘যত প্ল্যান–প্রোগ্রাম আমরা যা–ই করি না কেন, সেটাকে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করি। যদি আমরা নিজেদের কাজের সঙ্গে একেবারে বিলীন করে নিতে পারি এবং দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য দেশের কল্যাণের জন্য নিজের যত রকম আত্মত্যাগ করা দরকার সেই আত্মত্যাগ করার মানসিকতাটা নিয়ে যদি আমরা দেশের জন্য কাজ করি, তবেই কিন্তু এটা কার্যকর হবে। তা না হলে এটা কার্যকর হবে না।’