খসড়ায় ১১ সংশোধনী প্রস্তাব সংসদীয় কমিটির

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় ১১টি সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বুধবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো উত্থাপন করা হয়। তবে কোনো সংশোধনী চূড়ান্ত হয়নি।

এ বৈঠকে সাংবাদিকদের তিনটি পক্ষ সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ১৬ জুলাই আবারও সংসদীয় কমিটি এই তিনটি সংগঠনের সঙ্গে বসবে। ওই দিন নিজেদের মতামত জানাবে সাংবাদিক সংগঠনগুলো।

বৈঠকের একাধিক সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের’ শিরোনামে পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান কমানো, ২৫ ধারার একটি উপধারা বাতিল, কয়েকটি ক্ষেত্রে সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করা ও কিছু শব্দগত পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর আগে গত ২২ মে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হয়ে ৮টি ধারা নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা তুলে ধরেছিল সম্পাদক পরিষদ। ওই বৈঠকে অ্যাটকো, বিএফইউজেও নিজেদের আপত্তির কথা তুলে ধরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়।

বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, কিছু বিষয়ে সাংবাদিকদের আপত্তি ছিল। সংসদীয় কমিটি কমিটি ১১টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রস্তাব করেছে। সাংবাদিকেরা নিজেদের সঙ্গে আলোচনা করে নিজেদের অবস্থান জানাবেন। ১৬ জুলাই আবার বৈঠক হবে। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত আইনের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা হয়েছে। এর সংজ্ঞা হবে সংবিধানের প্রস্তাবে যে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে, তা এখানে প্রযোজ্য হবে। ২৫ নম্বর ধারার ‘খ’ উপধারা (এমন কোনো তথ্য সম্প্রচার বা প্রকাশ করা, যা কোনো ব্যক্তিকে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ করতে পারে) বাতিল এবং সব মিলে দুটি উপধারা করা, ২১ ধারায় সাজা যাবজ্জীবনের ক্ষেত্রে ১৪ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ সাজার কথা আইনে বলা হয়েছে। অপরাধ বিবেচনায় আদালত ঠিক করবেন সর্বনিম্ন সাজা কত দিন হবে। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সাজা ও জরিমানার পরিমাণ কমানো এবং কিছু শব্দগত পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের শাস্তির মাত্রাও সাত বছর থেকে কমিয়ে পাঁচ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বৈঠক শেষে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম দফা আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। তাঁরা সেগুলো পড়ে দেখার সুযোগ পাননি। সে কারণে তাৎক্ষণিকভাবে মতামত দিতে প্রস্তুত ছিলেন না। এসব সংশোধনীর বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে।
সম্পাদক পরিষদ যেসব আপত্তি ও দাবি জানিয়েছিল, সেগুলো পূরণ হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি। আলোচনা চলছে। আশা করি, আরও ব্যাপক আকারে আলোচনা হবে।’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যে পরিবর্তনগুলো করা প্রয়োজন ছিল, সে পরিবর্তনগুলো করা হয়েছে। ওনারা (সাংবাদিক পক্ষ) বলেছেন, এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে তাঁরা নিজস্ব ফোরামে আলোচনা করবেন। ১৬ জুলাই আবার বৈঠক হবে।

সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত আইনে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির সংজ্ঞায় অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুসরণ করার কথা বলা হয়। এতে সাংবাদিকেদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। এ বিষয়টি আরও পর্যালোচনা করা হবে।

এ বিষয়ে বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এবং বিশেষ আমন্ত্রণে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া কমিটির আমন্ত্রণে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও অ্যাটকোর সহসভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু বৈঠকে যোগ দেন।