খসড়া আইনে মেয়েদের ১৮ বছরের কমে বিয়ের বিধান
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের খসড়ায় ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার ‘বিশেষ বিধান’ বহাল আছে। প্রায় এক বছরের মাথায় গত সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ-বিষয়ক বিভাগ মতামত দিয়ে খসড়াটি মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খসড়ার ১৬ নম্বর ধারায় ‘বিশেষ বিধান’ রয়েছে।
এই বিশেষ বিধানে বলা আছে: ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন বিশেষ কারণ থাকিলে অথবা বিশেষ কারণের উদ্ভব হইলে, পিতা, মাতা বা অভিভাবকের সম্মতি অথবা আদালতের অনুমতিক্রমে ১৬ (ষোল) বৎসর পূর্ণ করিয়াছেন এমন কোন নারীর সহিত ২১ (একুশ) বা তদূর্ধ্ব বৎসরের অধিক বয়স্ক কোন পুরুষের বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা বাল্যবিবাহ বলিয়া গণ্য হইবে না।’
তবে বিশেষ বিধান ছাড়া খসড়ায় অপ্রাপ্তবয়স্ক বলতে ২১ বছর পূর্ণ করেননি এমন ছেলে এবং ১৮ বছর পূর্ণ করেননি এমন মেয়েকে বোঝানো হয়েছে।
মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে যে খসড়াটি পাঠিয়েছে, তার সবটুকু গ্রহণ করতে পারি, আবার দ্বিমতও করতে পারি। খসড়াটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হবে। তারপরই বিস্তারিত জানা যাবে।’
মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয় বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৪ নামে আইনের খসড়াটি যখন মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়, তখন তাতে উল্লেখ ছিল, ‘যুক্তিসংগত কারণে মা-বাবা বা আদালতের সম্মতিতে ১৬ বছর বয়সে কোনো নারী বিয়ে করলে সেই ক্ষেত্রে তিনি “অপরিণত বয়স্ক” বলে গণ্য হবেন না।’ মতামতের জন্য পাঠানোর আগে খসড়া আইনটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ ডিসেম্বর যে অনুশাসন দেন, তাতে বলা হয়, ‘বিয়ের বয়স ১৮, তবে পিতামাতা বা আদালতের সম্মতিতে ১৬ বছর সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সামাজিক সমস্যা কম হবে।’
গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাজা ও জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৪’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। একই বৈঠকে ১৯২৯ সালের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ২১ থেকে ১৮ এবং মেয়েদের ১৮ থেকে ১৬ করা যায় কি না, তা পর্যালোচনা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তবে শিশু ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা সরকারের এই ভাবনার সঙ্গে একমত হননি। তাঁদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে মেয়েদের বিয়ের বয়স কোনো শর্ত বা যুক্তিতেই যাতে সরকার না কমায়, সে দাবি জানানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ কোনো কিছু বর্তমান নারীবান্ধব সরকার গ্রহণ করবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।’
খসড়া আইনে বলা আছে, কেউ বাল্যবিবাহ করলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এতে অভিভাবকদের শাস্তির বিধান আছে। তবে কোনো নারী আইনের আওতায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া যাবে না। বাল্যবিবাহ নিবন্ধকের জন্য দণ্ডের বিধান আছে আইনে। অন্যদিকে বিয়ের সময় বয়স প্রমাণে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট আইনগত দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। খসড়া বলছে, অপরাধ ঘটার দুই বছরের মধ্যে অভিযোগ দায়ের করতে হবে।