খালেদার কার্যালয়ের ফটক বন্ধ, ফিরে এলেন হাসিনা

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গতকাল রাতে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে না পেরে তিনি ফিরে যান (গাড়িতে বসা) l ছবি: প্রথম আলো
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গতকাল রাতে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে না পেরে তিনি ফিরে যান (গাড়িতে বসা) l ছবি: প্রথম আলো

আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে তাঁর শোকাহত মা বিএনপির

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাঁর গুলশান কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষারত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাত ৮টা ৩৬ মিনিটে সেখানে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী l ছবি: প্রথম আলো
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাঁর গুলশান কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষারত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাত ৮টা ৩৬ মিনিটে সেখানে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী l ছবি: প্রথম আলো

চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গিয়েও ফটক থেকে ফিরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী গতকাল শনিবার রাত আটটা ৩৬ মিনিটে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে পৌঁছান। কিন্তু কার্যালয়ের ফটকটি ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় সেখানে সাত-আট মিনিট অপেক্ষা করে ফিরে আসেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী যখন ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন সেখানে বিএনপির কোনো নেতা বা চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কোনো কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ছিলেন না।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার পর গুলশান কার্যালয়ের সামনে তাঁর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এভাবে দরজা বন্ধ করে রাখা ভদ্রজনোচিত নয়। প্রধানমন্ত্রী একজন মা হিসেবে সমবেদনা জানাতে এসেছিলেন। এর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু গেট খোলা হয়নি।
তবে বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গেটে এসেছেন, এটা শুনে তিনি দৌড়ে ফটকের কাছে চলে আসেন। কিন্তু তার আগেই প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে চলে যান। তিনি বলেন, ‘আশা করি আওয়ামী লীগ বিষয়টি নিয়ে নোংরা রাজনীতি করবে না। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীকে সময় দেওয়া হবে।’
অবশ্য প্রধানমন্ত্রী আসার কয়েক মিনিট আগে কার্যালয়ের ভেতরে শিমুল বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, শোকাহত খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানাতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে আসার ইচ্ছাপোষণ করলেও ‘অসুস্থতার’ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সুস্থতা সাপেক্ষে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হতে পারে। এখনই খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন না—শিমুল বিশ্বাসের এমন ঘোষণার পর বাইরে থাকা বিএনপির কিছু নেতা-কর্মীকে হাততালি দিতে দেখা যায়।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাঁকে সমবেদনা জানাতে যাবেন বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়। সেই অনুযায়ী গুলশানে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী আসবেন বলে সন্ধ্যার পর থেকেই ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন এসএসএফের সদস্যরা। এ ছাড়া পিজিআরের সদস্যরা বাসা ও আশপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে। এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ভেতরে কোনো নেতা-কর্মীকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। কার্যালয়ের বাইরে গেটের কাছে বিএনপির প্রেস শাখার সদস্য ও কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ঘুরতে দেখা যায়। কিন্তু শেখ হাসিনা গণভবন থেকে রওনা হয়েছেন বলে নিরাপত্তারক্ষীদের ওয়্যারলেসে বার্তা আসার বিষয়টি সেখানে থাকা নেতা-কর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে প্রকাশ পেলে গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ভেতরে ঢুকে যান।
আগে থেকেই কার্যালয়ে ঢোকার বড় ফটকটির সামনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী সিএসএফের একটি গাড়ি দাঁড়ানো ছিল। শেখ হাসিনা আসার ১৫ মিনিট আগে কার্যালয়ে প্রবেশের ছোট ফটকটি ভেতর থেকে আটকে দেওয়া হয়। ওই সময় থেকে কার্যালয়ের সামনে বিএনপির চেয়ারপারসনের কোনো ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও কার্যালয়ের কাউকে বাইরে দেখা যায়নি।
এদিকে, রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের ভেতরে সাংবাদিকদের জানান, আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে শোকাহত মা খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে আসার জন্য রাতে ঘুম থেকে জেগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
মারুফ কামাল বলেন, খালেদা জিয়া মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন। তিনি শোকার্ত ও অসুস্থ। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। ঘুম থেকে জেগে উঠে যখন তিনি জানলেন প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানাতে এসেছিলেন, তখন তিনি আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। এরপর খালেদা জিয়া বলেন, যখন তিনি আসতে চাইবেন তখন তাঁকে স্বাগত জানানো হবে। মারুফ কামাল বলেন, ‘আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুতে খালেদা জিয়া সমবেদনা জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন। এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মারুফ কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে জানানো হয়েছিল, তাই এখানে প্রস্তুতি ছিল না। জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ছিলেন না, প্রধানমন্ত্রী অাচমকা এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে অসৌজন্য দেখানো হয়নি। যাই হোক প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, এটাই বড় কথা, তাঁকে ধন্যবাদ।’