১১ বছর পর দেশে আবার জনশুমারি শুরু হয়েছে। গণনাকারী ব্যক্তি আজ বুধবার সকাল আটটা থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছেন।
সরকারের খাতায় নাম ওঠাতে গণনাকারী আপনার বাসায় গিয়ে মোট ৪৫ ধরনের তথ্য চাইবেন। জনশুমারির এই কাজ চলবে ২১ জুন পর্যন্ত। এ সময়ে কেউ শুমারি থেকে বাদ পড়লে পরে নাম অন্তর্ভুক্তের সুযোগ আছে।
গণনাকারী চিনবেন কীভাবে
গণনাকারীর শরীরে বিশেষ একটি জ্যাকেট থাকবে। যেখানে লেখা থাকবে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’। হাতে একটি ট্যাব (ট্যাবলেট কম্পিউটার) থাকবে। হাতে থাকবে ফেস্টুন। আপনার বাসাবাড়িতে যেসব গণনাকারী যাবেন, তাঁদের প্রত্যেকের ছবি পার্শ্ববর্তী থানায় ও আপনার সোসাইটির প্রধানের কাছে সংরক্ষিত আছে। কোনো দুষ্কৃতকারী যাতে সুযোগ নিতে না পারে, সে জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় এক গণনাকারী কামরুল রেজার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, বাসায় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। অনেকে তথ্য দিতে চায় না। পরে আসতে বলে। অনেক জায়গায় বাসায় ঢুকতে দেয় না। সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তিনি ১০টি খানার তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন। বাসার সদস্যদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেলে এ সংখ্যা বাড়ত বলে জানান তিনি।
এসব কারণেই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তথ্য দিতে কেউ যেন ভয় না পায়, সে আহ্বান জানিয়েছে। গণনাকারীর কাছে সঠিক তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিবিএস।
গণনাকারী আপনার কাছে যেসব তথ্য জানতে চাইবেন
আপনার বাসার ধরন কী? আপনার বাসা কি সিমেন্ট/কংক্রিট/ইটের তৈরি? মাটি/বালু/কাদার তৈরি? অন্য উপকরণের তৈরি কি না। আপনি কি বস্তিতে থাকেন নাকি ভাসমান/ছিন্নমূল? আপনি যে বাসায় থাকেন তার মালিকানা নিয়ে জানতে চাইবেন গণনাকারী।
আপনার খাবার পানির প্রধান উৎস কী, পয়োনিষ্কাশনের ধরন কেমন, আপনার খানায় বিদ্যুৎ সুবিধার উৎস কী, রান্নার জ্বালানির উৎসও জানতে চাওয়া হবে।
আপনার খানা (পরিবার) কত সদস্যের, আপনার বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, খানাপ্রধান নারী নাকি পুরুষ, আপনার ধর্ম, বাসায় প্রতিবন্ধী কেউ আছে কি না, এসব প্রশ্ন করা হবে। আপনি পড়তে বা লিখতে পারেন কি না, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, আপনি কী ধরনের কাজ করেন, নিজস্ব ব্যবহারের মোবাইলের ধরন জানতে চাওয়া হবে। আপনি গত তিন মাসে একবারও ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো ব্যবহার করেছেন কি না, সেটিও জানতে চাইবে গণনাকারী।
আপনার ব্যাংক, বিমা, ডাকঘরে কোনো সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট আছে কি না, মোবাইল সেবা বিকাশ, নগদ রকেট অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হবে। আপনার খানার কোনো সদস্য বিদেশ থাকেন কি না কিংবা গত দুই বছরে খানায় বৈদেশিক রেমিট্যান্স এসেছে কি না, সে প্রশ্নও করা হবে। এভাবে ৪৫টি প্রশ্নের তথ্য নিতে গণনাকারীর সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ মিনিট।
ষষ্ঠ জনশুমারি শুরু হয়েছে গতকাল মধ্যরাত থেকে। ঢাকাসহ দেশের বড় শহরে ভাসমান মানুষকে গণনায় আনার মাধ্যমে জনশুমারি কাজ শুরু হয়েছে।
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের সামনে থেকে এক র্যালি বের করে বিবিএস। র্যালি শেষ হয় বিজ্ঞান জাদুঘরের সামনে। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিনসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দেশে এ পর্যন্ত পাঁচবার জনশুমারি হয়েছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। তবে এবারের ষষ্ঠ শুমারি করা হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এবারের শুমারির প্রতিপাদ্য ‘জনশুমারিতে তথ্য দিন, পরিকল্পিত উন্নয়নে অংশ নিন’। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারিতে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৯৮ লাখ। ২০০১ সালের আদমশুমারিতে ছিল ১৩ কোটি ৫ লাখ। ১৯৯১ সালে জনসংখ্যা ছিল ১১ কোটি ১৫ লাখ, ১৯৮১ সালের আদমশুমারিতে ছিল ৮ কোটি ৯৯ লাখ এবং ১৯৭৪ সালের প্রথম আদমশুমারিতে জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ।
২১ জুনের মধ্যে কেউ শুমারির আওতায় না এলে আপনার জেলার পরিসংখ্যান কার্যালয়ে গিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। সে সুযোগ রেখেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এ ছাড়া জনশুমারি–সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য কিংবা গণনায় অন্তর্ভুক্তের জন্য ০৯৬০২৯৯৮৮৭৭ কল সেন্টারের নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।