সুলতান, নবাব, কালা তুফান। এগুলো ষাঁড়ের নাম। এর মধ্যে কালা তুফানের দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। বাহারি নামের এই তিনটি ষাঁড়ই মিলবে কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা এলাকার শরীফনগরের গরুর খামার শরীফ অ্যাগ্রোভেটে।
পবিত্র ঈদুল আজহাকে উপলক্ষ করে কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা, আটি, কলাতিয়া, আতাসুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় শতাধিক খামারে পালন করা হয় উন্নত জাতের ষাঁড় ও বলদ।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শহীদ আতাহার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই উপজেলায় গবাদিপশুর ৩১০টি খামার আছে। এসব খামারে উন্নত জাতের ষাঁড় ও বলদ আছে প্রায় চার হাজার। এসব খামারের গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে যাতে রাসায়নিক ও ইনজেকশন ব্যবহার করা না হয়, সেদিকে তাঁদের নজরদারি আছে।

শরীফ অ্যাগ্রোভেটের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষে মাসখানেক আগে থেকে প্রতি শুক্রবার তাঁদের খামারে ‘গরুর মেলা’ বসানো হচ্ছে। রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসছেন। তিনি বলেন, তাঁরা নবাব-এর দাম চাইছেন ১৩ লাখ টাকা। একজন ক্রেতা ১২ লাখ টাকা বলেছেন। আর সুলতান-এর দাম হাঁকছেন ১০ লাখ টাকা। সাড়ে ৯ লাখ টাকা দাম উঠে গেছে। তবে কালা তুফান-এর দাম কেউ এখনো বলেননি।

সাইফুল ইসলাম জানান, কালা তুফানের বয়স সাড়ে তিন বছর। ওজন ১ হাজার ৩৫০ কেজি। নবাবের ওজন ১ হাজার ২৬৫ কেজি, বয়স সাড়ে তিন বছর। আর তিন বছর বয়সী সুলতানের ওজন ৯৯০ কেজি। তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়ান জাতের গরু তিনটি তাঁরা ভারত থেকে এনে বড় করেছেন। ভুসি, কুঁড়া ও কাঁচা ঘাস খাইয়ে গরুগুলোকে মোটাতাজা করা হয়েছে।
সাইফুল ইসলাম আরও জানান, খামারের মালিক রায়হান শরীফ ২০১৩ সালে কাঁচপুর এলাকায় ১০টি গরু নিয়ে খামার চালু করেন। সেখানে সাফল্যের মুখ দেখে কোনাখোলা এলাকায় নিজস্ব জায়গায় বড় পরিসরে খামার গড়ে তোলেন। বর্তমানে খামারে প্রায় ৫০০ গবাদিপশু আছে। এর মধ্যে তিন শতাধিক উন্নত জাতের ষাঁড় ও বলদ।
গত মঙ্গলবার ওই খামারে কথা হয় রাজধানীর গুলশান থেকে আসা একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যবসায়ী বলেন, তিনি গত ঈদুল আজহায় এই খামার থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় কিনেছেন। এবারও এসেছেন গরু কিনতে। কালা তুফান তাঁর পছন্দ হয়েছে। কিন্তু মালিক দামে ছাড় দিচ্ছেন না।

কেরানীগঞ্জের অন্যান্য খামারেও ক্রেতারা ভিড় করছেন। গদাবাগ এলাকার সারফু অ্যাগ্রোভেটের মালিক মো. সারফুদ্দিন জানান, যশোর ও কেরানীগঞ্জে তাঁর দুটি খামার আছে। কেরানীগঞ্জের খামারে ৬০টি উন্নত জাতের বলদ ও ষাঁড় আছে। তিনি বলেন, তাঁরা পশু মোটাতাজাকরণের জন্য রাসায়নিক ও ইনজেকশন ব্যবহার করেন না।
মো. সারফুদ্দিন বলেন, ভারত থেকে গবাদিপশু আমদানি করা হলে দেশের খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ ছাড়া গরু পালনেও নিরুৎসাহিত হবেন। তাই সরকারের উচিত বিদেশ থেকে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ করা ও দেশের খামারিদের সহায়তা করা।
সারফু অ্যাগ্রোভেটে আছে অস্ট্রেলিয়ান জাতের টাইগার। এর দাম হাঁকা হচ্ছে ৮ লাখ টাকা।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শহীদ আতাহার বলেন, ১০০ খামারিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই প্রশিক্ষণে খামারিদের রোগ প্রতিরোধ, কৃমিনাশক ওষুধ সেবনসহ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। এই অভিজ্ঞতা তাঁরা খামারে কাজে লাগাচ্ছেন।
