গাইবান্ধার ঈদের শপিং পাখি কিরণমালা, ঝিলিকের দখলে

ঝলমলে রঙিন আলোয় সাজানো গাইবান্ধা শহরের অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে ঝুলছে কিংবা থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পাখি, লুঙ্গি ড্যান্স, কিরণমালা, বাহা, জিপসি, বিজ কটন, ঝিলিক, মুসকান, ইশা, মোদি নামের ছেলে ও মেয়েদের পোশাক। তবে ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল স্টার জলসায় প্রচারিত নাটকের নায়ক-নায়িকাদের নামে তৈরি থ্রিপিস ও জামার চাহিদাই বেশি।
সরেজমিনে গত মঙ্গলবার রাতে শহরের অভিজাত বিপণিবিতান সালিমার সুপার মার্কেট, তরফদার ম্যানশন, ইসলাম প্লাজা, পৌর মার্কেট, শাপলা মার্কেট, গোবিন্দ প্লাজা ঘুরে দেখা যায় রঙিন বাতিতে ঝলমল করছে সব দোকানপাট। বিশেষত তৈরি পোশাক বিক্রির দোকানে উপচে পড়া ভিড়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা কিরণমালা, পাখি, বোঝে না সে বোঝে না, বাহা, ঝিলিক ও মুসকানের। এসব নামের প্রতিটি জামা বা থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ছয় হাজার টাকায়।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে শহরের সালিমার সুপার মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন গাইবান্ধা শহরের গোরস্থানপাড়ার বাসিন্দা চুনি ইসলাম। বললেন, ‘মেয়েকে অনেক থ্রিপিস দেখিয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চার হাজার টাকা দিয়ে একটি ‘ইশা’ সেট কিনে দিতে হয়েছে।’ এ সময় আরেক ক্রেতা গাইবান্ধা সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক আবু তালেব বলেন, ‘আমার মেয়ে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল স্টার জলসা দেখে। সে কিরণমালা জামা ছাড়া কিছু বুঝতে চাইছে না। বাধ্য হয়ে সাড়ে চার হাজার টাকায় ওই জামা কিনে দিলাম।’
সালিমার মার্কেটের পাশে তরফদার ম্যানশনে কেনাকাটা করতে আসা শহরের থানাপাড়ার চাকরিজীবী মোদাচ্ছেরুজ্জামান বলেন, ‘যেভাবে কিরণমালাসহ নাটক আর নাটকের নায়ক-নায়িকার নামে তৈরি পোশাক বেচাকেনা হচ্ছে, দেখে অবাক হলাম।’ তিনি আরও বলেন, বাজারে দেশীয় উন্নতমানের অনেক পোশাক রয়েছে। কিন্তু ঈদের বাজারে এসব পোশাক কেনাকাটার মধ্য দিয়ে দেশে ভারতীয় সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আর কিশোরীদের চাহিদার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটছেন। এ মানসিকতা থেকে সবার বেরিয়ে আসা দরকার বলে এ ক্রেতা মতপ্রকাশ করেন।
গাইবান্ধা ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া গ্রামের কলেজশিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সবাই আগে ছেলেমেয়ের পোশাক কিনছেন, পরে নিজেদের। এ সুযোগে বিক্রেতারা শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের পোশাকের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। শিশুদের পোশাক এক হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকা হচ্ছে।
সালিমার সুপার মার্কেটের রংবেরং দোকানের স্বত্বাধিকারী বাপ্পা সাহা অবশ্য বললেন, দাম বাড়ানো হয় না। বেশি দামে কিনতে হয় বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয় ব্যবসায়ীদের। তিনি জানান, শিশু ও নারীদের পোশাকের চাহিদা বেশি।
এ ছাড়া নতুন নাম ও ডিজাইনে পুরুষদের জিনস প্যান্ট, শর্ট পাঞ্জাবি ও গেঞ্জি বেচাকেনা হচ্ছে গাইবান্ধার শপিং সেন্টারগুলোতে। শাড়ির দোকানে এসেছে নতুন ডিজাইনের জামদানি, বুটিক, তসর, টাঙ্গাইল ও পাবনার তাঁত, রাজশাহী সিল্ক। প্রকারভেদে প্রতিটির দাম দেড় হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা। তবে এখন থান কাপড়ের বিক্রি কম। ব্যস্ততার কারণে এরই মধ্যে দরজিরা সেলাইয়ের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। শহরের স্টেশন রোডের পুম্পা গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী শাহজাহান খান বলেন, দিনের বেলা গ্রামাঞ্চলের ক্রেতা আর গভীর রাত পর্যন্ত শহরের ক্রেতারা কেনাকাটা করছেন।