‘গায়েবি’ মামলায় অধ্যাপক তাজমেরী কারাগারে

মারামারি ও বিস্ফোরক নিয়ে গাড়িতে হামলার চেষ্টার অভিযোগে অধ্যাপক তাজমেরীর বিরুদ্ধে মামলা হয় জানিয়ে পরিবারের দাবি, মামলাটি গায়েবি।

তাজমেরী এস এ ইসলাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তাজমেরী এস এ ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।

অধ্যাপক তাজমেরীর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানান, চার বছর আগের ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার একটি নাশকতার মামলায় অভিযোগপত্রে আসামি হওয়ার পর অধ্যাপক তাজমেরী আদালতে হাজিরা দেননি। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

অবশ্য তাজমেরীর পরিবার বলছে, ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উত্তরা এলাকায় মারামারি ও বিস্ফোরক নিয়ে গাড়িতে হামলার চেষ্টার অভিযোগে তাজমেরীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলাটি গায়েবি মামলা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে। কয়েকটি সংগঠনও গতকাল বিবৃতি দিয়ে তাঁর মুক্তি দাবি করেছে।

তাজমেরীর স্বামী মো. শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাজমেরীর বিরুদ্ধে অহেতুক মামলা হয়েছে। কাশিমপুর কারাগারে তাঁকে খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক অধ্যাপককে যেভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, তাতে মনে হয় দেশে কোনো আইনকানুন নেই। মানবাধিকার বলতেও কিছু নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক অধ্যাপককে যেভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, তাতে মনে হয় দেশে কোনো আইনকানুন নেই। মানবাধিকার বলতেও কিছু নেই।
মো. শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক তাজমেরীর স্বামী

মামলাটি নিয়ে শহীদুল ইসলাম বলেন, উত্তরা এলাকায় মারামারি হচ্ছিল। তাজমেরী নাকি বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ে গাড়ি পোড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, তাজমেরীর বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি বানোয়াট মামলা আছে। প্রায় সব মামলায়ই তিনি জামিনে রয়েছেন। এই মামলাটির বিষয়ে সেভাবে খেয়াল রাখা হয়নি।

আদালত ও আইনজীবী সূত্র জানায়, উত্তরা পশ্চিম থানার এই নাশকতার মামলায় ৭৫ জন অভিযোগপত্রভুক্ত আসামির মধ্যে অধ্যাপক তাজমেরীর নাম রয়েছে। ওই মামলায় তিনি জামিনে ছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এই মামলায় অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্র দেওয়ার পর অধ্যাপক তাজমেরী আদালতে হাজির হননি। এ কারণে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি শাহ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা শুধু আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করেছেন। কোন থানার মামলা, কী অভিযোগ—এসব তথ্য তাঁর জানা নেই।

‘এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’

পরিবার সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বছর পাঁচেক আগে অবসর নেন তাজমেরী এস ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল মনে করে, তাজমেরীর বিরুদ্ধে করা নাশকতার মামলাটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। সংগঠনটি গতকাল এক বিবৃতিতে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে বলেছে, তাজমেরীকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।

বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) অধ্যাপক তাজমেরীর মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে।