গ্রামের তরুণদেরও কাজে লাগাতে হবে

শহুরে তরুণদের পাশাপাশি গ্রামের তরুণদেরও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাঁদের কাজে লাগাতে হবে এবং উভয়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।

আজ শনিবার এক গোলটেবিল বৈঠকে কথাগুলো বলেছেন তরুণেরা। তাঁরা এ-ও বলেছেন, তরুণদের জন্য ইতিবাচক রাজনীতির ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। আর এর মধ্য দিয়েই ভবিষ্যৎ নির্মাণে তাঁরা শরিক হতে পারবেন।
‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ: আমাদের আশা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় কথাগুলো উঠে এসেছে। আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস) ও প্রথম আলো যৌথভাবে এর আয়োজন করে।
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, তরুণ উদ্যোক্তা, নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা তরুণ, গণমাধ্যমকর্মী, বিতার্কিক—এমন নানা ক্ষেত্রের তরুণেরা তাঁদের আশা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন আজকের বৈঠকে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিআইপিএসএসের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) মুনীরুজ্জামান বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ তরুণ। এ দেশের ভবিষ্যৎ এ সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের তরুণেরা অতীতে অনেক গর্বের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন।

শনিবারের ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ: আমাদের আশা প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
শনিবারের ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ: আমাদের আশা প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান বলেন, ‘তরুণদের মধ্যে যে রাজনীতিহীনতা আছে, এর জন্য তাদের দোষ দেওয়া যায় না। আমাদের রাজনীতির ধারা তাদের স্পর্শ করতে পারছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কোনো কাজই কিন্তু রাজনীতির বাইরে নয়। রাজনীতিকে ঘৃণা করে পিছিয়ে গেলে চলবে না। উন্নয়ন, দারিদ্র্য নিরসন, নারীর ক্ষমতায়নসহ যেকোনো কাজে আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন চাইলে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ জরুরি। রাজনীতি ইতিবাচক হলে সেখানে তরুণদের অংশগ্রহণও থাকবে।’
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের রাজনীতি, দর্শন ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইরিনা মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগ দরকার। বিশেষ করে পরিকল্পনা ও গবেষণার ক্ষেত্রে। শিক্ষা অনেক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে।’
প্রত্যন্ত এলাকার তরুণদের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার কথাটি আজকের আলোচনায় বারবার এসেছে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে যে ব্যবধান, প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও যে বড় ব্যবধান রয়ে গেছে, সেই বাস্তবতার কথা তুলে ধরেন টিচ ফর পিস প্রিনিউর ল্যাবের কর্মসূচি কর্মকর্তা সজল কুমার দাশ। সাইবার নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ দরকার আছে বলেও মত দেন তিনি।
নারী শিক্ষায় বাংলাদেশে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। তবে যে সংখ্যায় নারীরা উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন, তাঁরা কি সেই সংখ্যায় কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত হচ্ছেন? এ প্রশ্ন তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সিলভিয়া রোজারিও। পরিবার থেকে সমাজে নারীর অধস্তনতার পরিবর্তন হওয়া দরকার বলেও মত দেন এই শিক্ষার্থী।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উচ্চমাত্রায় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তবে সেই তুলনায় কর্মসংস্থান হচ্ছে অনেক কম। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি রাজনীতিকে এমনভাবে জড়িয়ে ফেলেছে যে তরুণেরা এ বিষয়ে আর আগ্রহী হচ্ছে না।’
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসোসিয়েশনের ইয়ুথ অ্যাডভাইজার ফাহমিদা ফাইজা বলেন, ‘দেশের বাইরে গেলে বাংলাদেশের নানা উন্নয়ন সূচকের তথ্য দিতে পারি না। আমাদের রাষ্ট্রীয় তথ্যভান্ডার সমৃদ্ধ নয়। এর পরিবর্তন করতে হবে। তথ্যভান্ডারকে পূর্ণ করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী এ কে এম তওসীফ তানজিম আহমেদ বলেন, ‘তরুণেরা চাইলেও রাজনীতিতে আসতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা যে পর্যায়েই রাজনীতিতে জড়াতে চাই না কেন, সেখানে সুবিধাবাদিতা রয়েছে। এর পরিবর্তন দরকার।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সাকিয়া হক, নারীর অগ্রগতির অন্যতম চালিকাশক্তি স্বাস্থ্য। নারী স্বাস্থ্যের উন্নয়নে আরও কর্মসূচি দরকার। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর ১৩ হাজার নারী সারভাইক্যাল ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এর নিরাময়ে একটি টিকাই যথেষ্ট। এর দাম কিন্তু ৫ হাজার টাকা। আমরা এমন অনেক নারী পাই, যাঁর ৫০০ টাকা খরচ করারও সংগতি নেই। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা দরকার।’
আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আবু সাঈদ জুবায়ের বলেন, তারুণ্যের শক্তি শুধু শহরকেন্দ্রিক নয়। কিন্তু আমাদের সব আলোচনাই শহরকেন্দ্রিক। সত্যিকারের উন্নয়ন যদি আমরা চাই, তবে শহর এবং গ্রামের তারুণ্যের শক্তিকে একত্র করতে হবে। তাদের মিলিত শক্তি কাজে লাগাতে হবে।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মুশফেকা ইসলাম বলেন, মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও গণমাধ্যমে ১০ শতাংশও নারী নেই। গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠানে রাতে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে ভালো ব্যবস্থা নেই।

গোলটেবিল বৈঠকে তাওসীফ তানজিম আহমেদ ও ফাহমিদা ফাইজা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
গোলটেবিল বৈঠকে তাওসীফ তানজিম আহমেদ ও ফাহমিদা ফাইজা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বিআইপিএসএসের গবেষণা সহযোগী সাব্বির আহমেদ জুবাইর বলেন, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ ভিন্ন দুটি বিষয়। শৃঙ্খলাবাহিনীর নানা তৎপরতা চলেছে জঙ্গিবাদ দূর করতে। কেউ যদি মনে করেন এর ফলে উগ্রবাদ নির্মূল হয়েছে, তবে তা ভুল। তিনি আরও বলেন, তরুণদের একটি বড় অংশ এ পথে ঝুঁকছে। জঙ্গিবাদ নির্মূলে যেসব কর্মপন্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে তরুণদের এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে মাথায় রাখতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চলনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
আরও বক্তব্য দেন পিসএম্পায়ের প্রতিষ্ঠাতা রকিবুল হাসান, লাইটহাউস এম্পোরিয়াম মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা এস আই এম শাদমান শেখ, ক্রিয়েটিভ রিফ্লেকশনের আরিফ আনজুম দীপ, ফাতিমা আলী ফাউন্ডেশনের ফাতিমা তুজ জোহরা, হ্যালো গভর্ন্যান্সের পরিচালক এস আই এম ফারহান শেখ, ওই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সাউসান সুহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী লামিয়া মোহসীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শারমিন আক্তার শাকিলা, গ্লোবাল শেপারস কমিউনিটির কিউরেটর সোহারা মেহরাজ শাচী, বুয়েট ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি তৌহিদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিমা তানজিনা, ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদক শাদমা মালিক, আরেক প্রতিবেদক মো. মুনতাকিম ইবনে সালেহীন।