গ্রামের ভরসা সৌরবিদ্যুৎ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার নুনেরটেক গ্রাম। মেঘনা নদীবেষ্টিত গ্রামটিতে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। তবে মানুষ থেমে নেই। সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে বাতি জ্বালাচ্ছেন তাঁরা। পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে তাঁদের জীবনধারায়।
গত শুক্র ও শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নুনেরটেক গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার ঘরের টিনের চালে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল। স্থানীয় বারদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য লোকমান মিয়া বলেন, স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ এই গ্রামের ১ হাজার ৫০০ মানুষের ঘর এখন সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। তিনি বলেন, বারদী ইউনিয়নের নাকাটিভাঙ্গা এলাকা দিয়ে দুটি বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করলেই এই গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব। কারণ, এই এলাকা দিয়ে প্রবাহিত মেঘনার শাখা নদীতে ইতিমধ্যে চর জেগে উঠেছে। এই মরা নদীটি চৈত্র ও বৈশাখ মাসে শুকিয়ে যায়। চর পড়ে নদীর প্রশস্ততা একেবারে কমে গেছে। বিভিন্ন সময় নির্বাচনের আগে সাংসদ থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এই গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলেন। তবে কেউ কথা রাখেননি। বিদ্যুৎ না পৌঁছানোয় গ্রামবাসী ঝুঁকেছেন সৌরবিদ্যুতে।
গ্রামের বাসিন্দা শুক্কুর আলী বলেন, ‘সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে আমরা টেলিভিশন দেখছি। মোবাইল চার্জ করছি। বাতি জ্বালাচ্ছি। সৌরবিদ্যুৎ আমাদের অন্ধকার দূর করেছে। গ্রামবাসীর জীবনধারা পাল্টে দিয়েছে।’
নুনেরটেক উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ শাহজালাল বলেন, ‘কেরোসিনের কুপির বদলে এখন এই গ্রামের শিশু-কিশোরেরা বিদ্যুতের আলোয় লেখাপড়া করে। আগে সন্ধ্যার মধ্যে সব শিশু ঘুমিয়ে পড়ত। কুপির আলোয় শিশুদের পড়তে কষ্ট হতো। এখন শিশুরা পড়তে পারছে। তাই লেখাপড়া বেশি হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ফলাফল আগের চেয়ে অনেক ভালো।’
বারদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জহিরুল হক বলেন, উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত নুনেরটেক গ্রামকে রাতে আলো ঝলমলে করে তুলছে সৌরবিদ্যুৎ। এই গ্রামের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। ৩০ ভাগ মানুষ হতদরিদ্র হওয়ায় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারছেন না।
গ্রামবাসী জানান, ১০ ওয়াটের একটি সোলার প্যানেল বসাতে খরচ হচ্ছে আট হাজার টাকার মতো। এ দিয়ে আড়াই ওয়াটের দুটি এলইডি বাল্ব জ্বালানো যায়। ১০০ ওয়াটের সোলার প্যানেল বসাতে খরচ হয় ৩৫ হাজার টাকা। আগে একটি এনজিওর মাধ্যমে গ্রামে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হতো। বর্তমানে ঢাকার নবাবপুর রোড থেকে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল ও ব্যাটারি কিনে ব্যবহার করছেন গ্রামবাসী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, ‘গ্রামটিতে সৌরবিদ্যুতের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখে আনন্দিত হয়েছি। এ বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে মানুষ শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ নানা বিষয়ে সচেতন হচ্ছে। তবে গ্রামটিতে বিদ্যুৎ পৌঁছালে মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও বাড়বে।’
পল্লী বিদ্যুতের সোনারগাঁ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘নুনেরটেক গ্রামে বিদ্যুতের লাইন সংযোজনের জন্য আমরা প্রাক্কলন ব্যয় পল্লী বিদ্যুতের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। কোনো নির্দেশনা না আসায় আমরা কাজ করতে পারছি না। প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত হলে ওই গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হবে।’