ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল...

গ্রাম-বাংলায় প্রচলিত একটি কথা আছে, শখের তোলা নাকি আশি টাকা। একেকজন মানুষের একেক রকমের শখ। কারও শখ গাড়ি-বাড়ির, কারও ঘোড়া কেনার। সব মানুষই সাধ আর সাধ্যের মধ্যে নিজের শখ পূরণের চেষ্টা করেন।
মতিউর রহমান (৪২)। তিনি পেশায় একজন দরজি। তাঁর বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরশহরের পশ্চিম হাস্তাবসন্তপুর মহল্লায়। বেশির ভাগ মানুষের গাড়ি-বাড়ির শখ থাকলেও দরজি মতিউর রহমানের অন্য রকমের শখ। তাঁর শখ ছিল একটি ঘোড়া কেনার। তিনি তাঁর প্রতিদিনের রোজগারের টাকা থেকে ঘোড়া কেনার জন্য কিছু টাকা জমা করতেন।
মতিউর রহমান তাঁর দীর্ঘ দুই বছরের জমানো টাকায় আজ বৃহস্পতিবার গোপীনাথপুর দোলপূর্ণিমা মেলা থেকে ছোট্ট একটি ঘোড়া কিনেছেন। সেই ঘোড়ায় ছেলেকে চড়িয়ে দিয়ে তিনি লাগাম হাতে নিয়ে মেলা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। ঘোড়াটি নিয়ে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় আক্কেলপুর পৌরশহরের নবাবগঞ্জ সেতু এলাকায় এলে লোকজন দেখে সেখানে একটু দাঁড়ান। ‘ভাই, ঘোড়া কত দিয়ে কিনলেন’, ‘খুব ভালো হয়েছে, আরেকটু বড় হলে ভালো হতো’, লোকজনের নানা রকমের প্রশ্নে তাঁর একটুও বিরক্তি ছিল না। তিনি ঘোড়ার লাগাম হাতে নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে এলেও তাঁর মধ্যে এতটুকু ক্লান্তি ছিল না। বরং চোখে-মুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক।
মতিউর রহমান বলেন, ‘মানুষের গাড়ি-বাড়ি করার শখ থাকে। আমার ঘোড়া কেনার শখ ছিল। দুই বছর ধরে প্রতিদিনের রোজগারের কিছু অংশ ঘোড়া কেনার জন্য রাখতাম। গোপীনাথপুর মেলায় গিয়ে শখ পূরণ করেছি। এবার গোপীনাথপুর দোলপূর্ণিমা মেলায় প্রচুর ঘোড়া এসেছে। মেলায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার ঘোড়া রয়েছে। এত টাকায় ঘোড়া কেনা আমার সামর্থ্যের বাইরে ছিল। আমার সাধ্যের মধ্যে ১৩ হাজার টাকায় ঘোড়াটি কিনেছি।’
যোগাযোগ করা হলে গোপীনাথপুর দোলপূর্ণিমা মেলা কমিটির সভাপতি ও গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ জোয়ারদার বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মেলায় প্রচুর ঘোড়া উঠেছে। ঘোড়া কেনাবেচাও ভালো হচ্ছে। যান্ত্রিক যুগে ঘোড়ার তেমন প্রয়োজনীয়তা নেই। লোকজন শখের বশে ঘোড়া কিনছে।