চকবাজারের ব্যবসায়ীদের দম ফেলার সময় নেই

ঈদ সামনে রেখে পুরান ঢাকার চকবাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে বেচাকেনা ​বেড়েছে। গতকাল কসমেটিকের একটি দোকানে ক্রেতাদের ভিড় l ছবি: প্রথম আলো
ঈদ সামনে রেখে পুরান ঢাকার চকবাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে বেচাকেনা ​বেড়েছে। গতকাল কসমেটিকের একটি দোকানে ক্রেতাদের ভিড় l ছবি: প্রথম আলো

কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের রাস্তা থেকে রিকশায় করে আর যাওয়া গেল না। মানুষ আর যানের ভিড়ে হেঁটে যেতেও বেগ পেতে হয়েছে। অনেক কষ্টে মূল চকবাজারে পৌঁছে দেখা গেল, কেনাবেচার উৎসব সেখানে। কথা বলা তো দূরের কথা, দম ফেলার সময় যেন তাঁদের নেই।
ঈদ সামনে রেখে দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি পণ্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্র পুরান ঢাকার চকবাজারের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। চকবাজার ছাড়াও আশপাশের সোয়ারীঘাট এলাকা, মৌলভীবাজার, বেগম বাজার, উর্দু রোড থেকে সারা দেশেই বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাইকারি সরবরাহ করা হয়। পাঞ্জাবি, জামা, থ্রিপিস, বাচ্চাদের পোশাক থেকে শুরু করে চুড়ি, ইমিটেশন অলংকার ও প্রসাধনীর প্রধান পাইকারি বাজার এখানে। ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার খুচরা দোকানে এখানকার পাইকারি দোকান থেকেই মালামাল যাচ্ছে। খুচরা বিক্রির কারবার এখানে নেই। এবারেও চক এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার ব্যবসায়ীরা ঈদ উপলক্ষে মালামাল তৈরি ও আমদানি করেছেন পর্যাপ্ত।
সারা বছর ব্যবসা-বাণিজ্য চালু থাকলেও ঈদকে কেন্দ্র করে এখানে বেচাকেনা অনেক বেড়ে যায়। মূল চকবাজার ‘হক স্টোর’ এর আশরাফ হোসেনের তথ্যানুযায়ী, সাধারণত তিনটি চালানে তাঁদের ঈদের ব্যবসা হয়ে থাকে। শবে বরাতের পর প্রথম চালানটি চলে যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। দ্বিতীয় চালানটি যায় রোজার প্রথম দু-তিন দিনের মধ্যে, শেষ চালানটি ১০ থেকে ১৫ রোজার মধ্যে। তিনি বলেন, পাইকারি ব্যবসার পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি দীর্ঘদিন আগে থেকে হয়। এবার বছরের শুরুতে ছিল ভোটের ব্যস্ততা। কিছুদিন আগেই ছিল বাজেটের ব্যস্ততা। এসব মিলে মানুষ তার ব্যবসায় অর্থ লগ্নি করতে একটু বেশি সময় নিয়েছে। তবে গত কয়েক দিনের বেচাকেনা ভালো।
পাইকারি বাজারের মধ্যে চকবাজারের কাছাকাছি ফেন্সি মার্কেট, খান মার্কেট, মোহাম্মদিয়া, এনায়েত করিম মার্কেট, হানিফ ম্যানসন, ওয়াহেদ, খাজা, ইয়াকুব, খান মার্কেট, হালিমা ম্যানসন ও সিটি করপোরেশনের নতুন সুপার মার্কেটসহ অনেকগুলো বহুতল সুপার মার্কেট গড়ে উঠেছে। এসব মার্কেটে উৎপাদক ও আমদানিকারকদের কয়েক হাজার পাইকারি দোকান।
সোয়ারীঘাট এলাকার মেসার্স সুমনা পাদুকালয়ের মো. সুমন জানালেন, ঈদ সামনে রেখে প্রতিবারই নতুন ডিজাইনের জুতা আনতে হয়। দেরিতে বাজার জমলে নকশা অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করতে সমস্যা হয়। কেননা এতে বাজারের চাহিদা বুঝতে সময় লেগে যায়।
চকের অসংখ্য দোকান আছে, যেখানে শুধু দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন তালাচাবি, টুথব্রাশ, কটনবাড, ক্লিপ সামগ্রী বিক্রি হয়। মেসার্স ফজলুর হকের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জুবায়ের জানালেন, ঈদ উপলক্ষে মানুষ জামাকাপড় কেনার পাশাপাশি বাজারে গিয়ে সারা বছরের চাহিদা হিসেবে এ পণ্যগুলো সংগ্রহ করেন। একই চিত্র দেখা গেল জুয়েলারি দোকানগুলোতে। ভাতপট্টির মেসার্স কলিম স্টোরের নূর ইসলাম জানান, স্থানীয়ভাবে তৈরি ইমিটেশনের গয়নার পাশাপাশি চীনসহ বিভিন্ন দেশের গয়নার বেশ চাহিদা তৈরি হয়েছে বাজারে।
চক এলাকার ফেন্সি মার্কেটে মূলত গৃহসজ্জা ও প্রসাধনসামগ্রী বিক্রি হয়। অধরা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এনায়েত করিম জানান, ‘ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় লোকে অনেক বিচার-বিবেচনা করে যা না হলেই চলে না, তেমন জিনিসই কিনছেন। সাধারণ মানুষের কেনাকাটার পরিমাণ কমে গেছে।’
পাশাপাশি এবারের ঈদ ইংরেজি মাসের শেষ দিকে পড়ায় চাকরিজীবীদের অনেকেই ধীরে চলো নীতি নিয়েছেন। তাঁরা হাত খুলে কিনতে পারছেন না। বোনাস পেলে খুচরা বিক্রি বাড়লে তখন হয়তো পাইকারি বাজারে দ্বিতীয় বা তৃতীয় চালানের জন্য মালের টান শুরু হবে, এমনই ধারণা করছেন চকের ব্যবসায়ীরা।
বিক্রি যা-ই হোক, চকের সব এলাকায় ব্যবসায়ীদের একটাই দুঃখ—যানজট। এ দুর্ভোগের কারণে অনেকেই চকে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ কারণে এখানকার রাস্তাগুলোকে একমুখী এবং সড়কের যানবাহন ব্যবস্থাপনার জন্য পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত স্বেচ্ছাসেবী রেখেছে এখানকার ব্যবসায়ীদের সমিতিগুলো।