চকলেটের ইতিকথা

দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দিনটিতে প্রিয়জনকে ফুল আর চকলেট উপহার না দিলে যেন চলে না। তাই দিনটিকে ঘিরে এ দুটির কদরও থাকে আলাদা। এই দিনটিকে সামনে রেখে চকলেটের ইতিবৃত্ত জেনে নেওয়া যাক।
চকলেটের আদিকথা
কোকো বীজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যবহার কী? নিশ্চয় চকলেট তৈরি। তবে প্রাচীন মায়া সভ্যতায় কোকো বিন ব্যবহার করা হতো মুদ্রা হিসেবে। তাদের ধারণা ছিল সোনার চেয়েও এই বস্তু বেশি দামি। সহজ প্রাপ্যতা ঠেকাতে এমনকি কোকো বিন চাষের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। চকলেটের ইতিহাসটা এমনই বৈচিত্র্যে ভরা। শুরুটা অবশ্য সেই মায়ানদের হাত ধরেই। কলম্বিয়া পূর্ব মেক্সিকোয় মায়ান এবং অ্যাজটেকরা কোকো বিন দিয়ে ‘জোকোটিল’ নামের এক ধরনের পানীয় তৈরি করত। ১৫২৮ সালের ঘটনা, মেক্সিকো বিজয় শেষে এই চকলেট নিয়ে ঘরে ফেরে স্প্যানিয়ার্ডরা। চকলেট পৌঁছে যায় স্পেনে। সেখানেও অবশ্য সেই পানীয় হিসেবেই পান করা হতো। এ রকমই এক পানীয় ১৬১৫ সালে ফ্রান্সের রাজ পরিবারের এক বিবাহ অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়। ১৬২২ সালে এটা পৌঁছে ইংরেজদের ঘরেও। যা-হোক, তখনো কিন্তু ‘চকলেট’ শব্দটার প্রচলন হয়নি। কেউ বলতো ‘চকাল্যাটল’, কেউ ‘জোকোল্যাটে’, কেউ কেউ আরো একটু কাছাকাছি গিয়ে ‘চকেলেট’।
চর্বণ-চূষ্য চকলেটের প্রথম প্রচলন হয় ১৮৪৭ সালে এসে। সে সময় ইংল্যান্ডে ফ্রাই অ্যান্ড সন্স নামের এক প্রতিষ্ঠান চকলেট বাজারে ছাড়লেও তিতকুটে স্বাদের জন্য জনমনে ঠিক আগ্রহ তৈরি করতে পারেনি। পরে বিখ্যাত সুইস চকলেট প্রস্তুতকারক ড্যানিয়েল পিটার নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তিনি বিভিন্ন মিশ্রণে চকলেট তৈরি করা শুরু করেন। অবশেষে বুঝতে পারেন দুধ মেশালে চকলেটের স্বাদ বেড়ে যায় বহুগুণ। বলা যায়, আধুনিক চকলেটের সেই শুরু। হুহু করে মানুষের ঘরে পৌঁছে যায় চকলেট।

চকলেট বীজের উৎপাদন
সাধারণত বিষুবরেখা ২০ ডিগ্রি উত্তর বা দক্ষিণের উপযুক্ত ভূমিতে কোকো বীজের চাষ করা হয়। একটি পরিপূর্ণ কোকো গাছ থেকে বছরে গড়ে পাঁচ পাউন্ড চকলেট তৈরি করা সম্ভব। বড় বড় আম অথবা কলাগাছের ছায়ায় কোকো গাছ লাগানো হয়, প্রতি হেক্টরে এক হাজারের মতো গাছের চাষ করা যায়।
পাঁচ থেকে আট বছরে পূর্ণতা পায় কোকো গাছ। গাছ থেকে পেড়ে কোকো বীজগুলো বের করে সপ্তাহখানেকের জন্য মোটা ক্যানভাসের কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়। এতে কোকো বীজগুলো বাদামি রং ধারণ করে। এরপর আবার রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা কমিয়ে ৭ শতাংশের নিচে আনা হয়। এতে সময় লাগে বড়জোর তিন দিন।
যাচাই-বাছাই-পরিষ্কার শেষে মেপে এই কোকো বিনগুলো ২৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপে দুই ঘণ্টা রেখে দেওয়া হয়। এরপর বীজের খোলস ছাড়িয়ে পাওয়া শাঁস গুঁড়া করে চকলেটের কাঁচামাল তৈরি করা হয়। এরপর আপনার যা খুশি বানিয়ে নিন!

চকলেটের প্রকারভেদ
মিল্ক চকলেট: এ ধরনের চকলেটে অন্তত ১০ শতাংশ চকলেট লিকার ও ১২ শতাংশ দুধের সঙ্গে চিনি, কোকো বাটার ও ভ্যানিলা মেশানো হয়। আবার মিষ্টি বা আধা মিষ্টি চকলেটে ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ চকলেট লিকার থাকে। এগুলোকে সাধারণত ‘ডার্ক’ অথবা ‘প্লেইন’ চকলেট বলা হয়। বেকিং চকলেটও বলা হয় কারণ ডেজার্ট তৈরিতে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
তিতকুটে চকলেট: এই চকলেটে ৫০ শতাংশ চকলেট লিকার মেশানো হয়। তিতকুটে কিংবা মিষ্টিহীন স্বাদের এই চকলেট গুলোকেও ‘বেকারস’ চকলেট বলা হয়।
ক্রিম এবং অন্যান্য: এগুলোও চকলেট, তবে অন্যান্য উপাদানের ওপরে চকলেটের প্রলেপে তৈরি হয়। সহজে মুখে পুরে যায় এমন আকার দেওয়া হয়। চকলেটের প্রলেপের নিচে ক্যারামেল, বাদাম, ক্রিম, জেলি এবং অন্যান্য উপাদানের মিশ্রণ থাকতে পারে।
হোয়াইট চকলেট: নামে চকলেট হলেও হোয়াইট চকলেট আসলে কোনো চকলেট না। কারণ এতে কোনো চকলেট লিকার থাকে না। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের কিছু ফল চূর্ণ করে তৈরি করা বাদামি পাউডার এটি। এ জিনিস অনেকেই চকলেটের পরিবর্তে খেয়ে থাকেন। কারণ ভোজ্য তেল এবং চিনি সঙ্গে মিশিয়ে চকলেটের বিকল্প হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যায়।
সূত্র: মি. মায়ার্স চকলেট ওয়েবপোর্টাল।