চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার কারণ খুঁজতে ৪ সদস্যের কমিটি

নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আয়োজিত সভা শেষে বক্তব্য দেন চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চলতি সপ্তাহে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে চট্টগ্রাম নগরবাসীকে। বিভিন্ন এলাকায় দিনের পর দিন পানি জমে রয়েছে। এভাবে জলাবদ্ধতা হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ১০ দিনের মধ্যে কমিটিকে কারণ চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।

বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগর এলাকায় জলাবদ্ধতার প্রকোপ নিরসনে করণীয় নির্ধারণ-সংক্রান্ত বিশেষ সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়। নগরের টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিতে আছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও প্রকল্প পরিচালক মো. শাহ আলী, সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোবারক আলী।

গত বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত হওয়া বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। কিছু কিছু এলাকায় টানা সাত দিন ধরে পানি জমে আছে। খোদ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বহদ্দারহাটের বাড়িতে পানি জমেছিল তিন দিন ধরে। ভারী বর্ষণে হওয়া জলাবদ্ধতার কারণে নগরের মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এভাবে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় বুধবার জরুরি সভায় বসেন নগরের সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা।

সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এবার জলাবদ্ধতায় বেশি ভোগান্তি হয়েছে। যেকোনো উন্নয়নকাজ হলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এবার প্রবল বর্ষণ হয়েছে। এ জন্য ভোগান্তি বেশি হয়েছে। বিষয়টা সব কর্তৃপক্ষকে নাড়া দিয়েছে। জনগণকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে আমরা একযোগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ শুরু করেছি।’

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পানি যাতে দ্রুত নেমে যায় ও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ সহনীয় হয়, এসব বিষয়ে নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটি ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করে পানিনিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করবে। আর করণীয় বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে। এই কমিটিকে সব সংস্থা সহযোগিতা করবে।

পানিনিষ্কাশনের সব প্রতিবন্ধকতা অপসারণে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, পানিনিষ্কাশনের বাধাগুলো দূর করা হলে জনগণের ভোগান্তি কমে যাবে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। সিডিএ, সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। একটি প্রকল্পও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি সংস্থাগুলো। বারবার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

৬০ ফুটের খাল এখন ৩ ফুটের নালা

সভা শুরুর আগে নগরের খালগুলোতে পানিনিষ্কাশনে থাকা প্রতিবন্ধকতার চিত্র উপস্থাপন করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, এখনো ১৮টি খালের ২০টি স্থানে প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। বিশেষ করে নগরের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী টানেলের মুখে ৬০ ফুটের একটি খালকে ৩ ফুটের নালায় পরিণত করা হয়েছে। আবার নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপ নগরের ভিআইপি সড়কের পাশের একটি খাল মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে।

বুধবারের সভায় অংশ নেওয়া একটি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম নগর কয়েক দিন ধরে পানিতে ডুবে রয়েছে। এটি তো হতে পারে না। এ জন্য খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতিকে জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী করেন। এ সময় তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ।

সভায় অংশ নেন সিডিএর চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম অঞ্চল) মো. রমজান আলী প্রামাণিক প্রমুখ।