চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু

গত রোববার রাতে নিজ বাসা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজ ছিলেন তুখোড় বিতার্কিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। ছবিটি ৩১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনের সময় তোলা । ছবি: সংগৃহীত
গত রোববার রাতে নিজ বাসা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজ ছিলেন তুখোড় বিতার্কিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। ছবিটি ৩১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনের সময় তোলা । ছবি: সংগৃহীত

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার, বহিষ্কারের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন দিয়াজের অনুসারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ রোববার ভোর ছয়টা থেকে সচেতন ছাত্রছাত্রীদের ব্যানারে দিয়াজের অনুসারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। অবরোধের কারণে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের ক্লাস শুরু হয়নি।
পাঁচ দফা দাবি হলো দিয়াজ হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে প্রক্টরিয়াল বডি থেকে দ্রুত অপসারণ ও চাকরিচ্যুত করতে হবে, এই হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, দিয়াজ হত্যা মামলার সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে, আগের ময়নাতদন্ত বাতিল করে আবারও ময়নাতদন্ত করতে হবে, শিক্ষায় সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও দিয়াজের অনুসারী মো. মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিয়াজ হত্যার বিচার দাবিতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছি। দিয়াজের মায়ের মতো আর কোনো মায়ের বুক যেন সন্ত্রাসীরা খালি না করতে পারে, এ জন্য আমরা এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমাদের পাঁচ দফা দাবি না মানলে অবরোধ কর্মসূচি চলতে থাকবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক আবু সাঈদ মারজান বলেন, ‘দিয়াজ হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে দ্রুত অপসারণ ও চাকরিচ্যুত করার দাবিতে আমরা এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘আমাদের এ অবরোধ কর্মসূচিতে সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরী পুলিশ দিয়ে আমাদের হয়রানি করছেন।’

ষোলোশহর স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. শাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকে অবরোধকারীরা শাটল ট্রেনটি অবরোধ করে রেখেছেন। এ কারণে তা বন্ধ আছে। কখন চলবে, তা বলা যাচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ কামরুল হুদা বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে বসব। দিয়াজের ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরাও চাই, দিয়াজের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’

গত রোববার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট এলাকার নিজ বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ২২ দিন আগে দিয়াজসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার নেতার বাসায় তাণ্ডব চালানো হয়। ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী নেতা-কর্মীরা ওই হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ভবন নির্মাণের দরপত্রকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে আড়াই মাস ধরে একের পর এক পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ছয়বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন।

দিয়াজ ইরফানকে হত্যা করা হয়েছে—এমন আলামত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মেলেনি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে গত বুধবার সাংবাদিকদের এ কথা জানায় পুলিশ। তবে এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে দিয়াজের পরিবারসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশ। তারা বলছে, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনের সঙ্গে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের কোনো মিল নেই।

এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ছাত্রলীগের নয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নিহত দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শিপলু কুমার দের আদালতে মামলাটি করেন।