চট্টগ্রাম-৬ আসনে চাচা-ভাতিজার ভোট লড়াই

চট্টগ্রাম-৬ রাউজানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চাচা ফজলে করিম চৌধুরী ও ভাতিজা বিএনপির প্রার্থী সামির কাদের চৌধুরী। ছবি: ফাইল ছবি
চট্টগ্রাম-৬ রাউজানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চাচা ফজলে করিম চৌধুরী ও ভাতিজা বিএনপির প্রার্থী সামির কাদের চৌধুরী। ছবি: ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে মনোনয়ন জমাদানের শেষ দিনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দুজন। তবে শেষ পর্যন্ত এ আসনে চাচা–ভাতিজার ভোট লড়াই হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

দুই দলের নেতা–কর্মীরা বলছেন, এ আসনে আওয়ামী লীগের ফজলে করিম চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপির সামির কাদের চৌধুরীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

চট্টগ্রাম-৬ আসনে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী ফজলে করিম চৌধুরী। এ আসনে সামির কাদের চৌধুরী ছাড়া বিএনপির অপর অন্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

বুধবার মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে দুপুর ১২টার দিকে রাউজান উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেনের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন নৌকার একক প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। ফজলে করিম ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেননি। তবে জেলা রিটার্নিং কমর্কর্তার কাছে একই দিন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রাউজানের বিএনপির সাবেক সাংসদ গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র সামির কাদের চৌধুরী।

সামির কাদের চৌধুরী ফজলে করিম চৌধুরীর আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। এ ছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান জেলা বিএনপির সদস্য জসিম উদ্দিন সিকদার।

বিএনপির উপজেলা নেতা–কর্মীরা জানান, এ আসনে শেষ পর্যন্ত সামির কাদের চৌধুরীই নির্বাচন করবেন। 

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী মনোনয়ন লাভ করেছিলেন। সেই নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে হারতে হয় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে। ২০০১ সালে তাঁকে দ্বিতীয়বারের মতো মনোনয়ন দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তিন মেয়াদে হ্যাটট্রিক সাংসদ হন ফজলে করিম। সাংসদ থাকাকালে ফজলে করিম নিজ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কমর্কাণ্ড চালিয়ে দলীয় নেতা–কর্মী ছাড়াও সব শ্রেণির মানুষের আস্থা অর্জন করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নৌকার প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এবার চতুর্থবারের মতো জয়ী হবেন বলে আশাবাদী স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সব নেতা–কর্মী সাংসদ ফজলে করিমের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। দিনরাত ২২ বছর ধরে রাউজানে ১৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন ফজলে করিম। তাই তাঁর বিজয় সুনিশ্চিত।

দেশে আলোচিত ও সমালোচিত ফজলুল কাদের চৌধুরী পরিবারের সদস্য সামির কাদের চৌধুরী। তিনি ফজলুল কাদের চৌধুরীর নাতি। বাবা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া আসনের সাবেক সাংসদ। বিএনপির ছাড়াও তাঁদের চৌধুরী পরিবারের বিশাল ভোটব্যাংক রয়েছে উত্তর চট্টগ্রামে। তবে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাঁর বড় চাচা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি র্কাযকর হলে পরিবারটি অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

সামির কাদের রাউজান উপজেলা বিএনপির সদস্য। বিপিএলের দল চিটাগাং কিংসের অন্যতম মালিকও তিনি।

রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, দলের প্রার্থী হিসেবে সামির কাদের চৌধুরীই নির্বাচন করবেন। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য তৃণমুল থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। এখানে সামির কাদেরের পক্ষে দলীয় নেতা–কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। বাকি অন্য প্রার্থীরা সামির কাদেরকে সমর্থন করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলেও জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরী উপজেলা রিটার্নিং কমর্কর্তার কাযার্লয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম এহেছানুল হায়দর চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহাব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জমির উদ্দিন পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদুল জব্বার সোহেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ফজলে করিম চৌধুরীর ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী প্রমুখ।