চবি শিক্ষককে ঠিকাদারের হুমকি, নির্মাণকাজ বন্ধ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের (চবি) সভাপতি মো. আলী হায়দারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। বিভাগের নির্মাণকাজ শেষ করার আগেই ওই ঠিকাদার ছাড়পত্র চেয়েছিলেন। কিন্তু শতভাগ কাজ শেষ না করায় বিভাগের সভাপতি তা দেননি। এ কারণে সভাপতিকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

আজ মঙ্গলবার ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে পানি ও বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ করে দেন ওই ঠিকাদার। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছে। পানি ও বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দেওয়ায় শিক্ষকেরা ক্ষুব্ধ।

বিভাগের সভাপতি মো. আলী হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সোমবার ঠিকাদার জাহেদুল আলম চৌধুরী তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। কাজ শেষ না করে ছাড়পত্র দিতে চাপ প্রয়োগ করেছেন। তিনি ছাড়পত্র দেননি। এ কারণে পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, বিভাগে আজ প্রথম বর্ষের ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল নয়টায়। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় পরীক্ষা শুরু হয়নি। পরে বেলা একটায় সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় পরীক্ষা। হুমকির বিষয়ে জানতে ঠিকাদার জাহেদুল আলম চৌধুরীকে ১০ বার ফোন করা হয় ও ঘটনার বিবরণ দিয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। খুদে বার্তার জবাব দেননি।

ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদ ভবনের পঞ্চম তলার দক্ষিণ ব্লকে অবস্থিত। এ ব্লকটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে কাজ এখনো শেষ হয়নি। বিভাগটির শ্রেণিকক্ষ রয়েছে ৬টি, ল্যাব ৯টি, শিক্ষকদের বসার কক্ষ ২৩টি, অফিস কক্ষ ২টি, সভাপতির কার্যালয় ও শৌচাগার রয়েছে ৭টা। ব্লকের নির্মাণকাজ করছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুরুল আলম চৌধুরীর ছোট ভাই জাহেদুল আলম চৌধুরী। এটি ছাড়াও জাহেদুল আলম চৌধুরী আরও দুটি কাজ করছেন। এগুলো হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের জন্য কোয়ার্টার নির্মাণ ও ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের জন্য একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজ। এ দুটি কাজও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি।

যেসব কাজ এখনো বাকি

নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করতে গত ১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজলকে চিঠি দিয়েছিলেন মো. আলী হায়দার। চিঠিতে কাজের বিস্তারিত বিবরণ ছিল। এতে দেখা যায়, শৌচাগারগুলোয় লাইট দেওয়া হয়নি। পানির ট্যাপ নেই। দরজা খোলা ও বন্ধ করা যায় না। বিভিন্ন কক্ষের দেয়ালে রং দেওয়া হয়নি। সিঁড়ির সামনে কলাপসিবল গেট দেওয়া হয়নি। বিদ্যুতের সুইচ দেওয়া হয়নি। স্টোররুমের দরজা ভাঙা। বারান্দার ছাদ থেকে পানি পড়ে। বেশ কয়েকটি কক্ষে পর্দা লাগানোর ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু কাজ বাকি আছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।

অবশ্য কাজ বাকি থাকলেও তা আদায় করার চেষ্টা নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এমন অভিযোগ করছেন শিক্ষকেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চার সিনেট সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি নজিরবিহীন। আগে কখনো কোনো ঠিকাদার এ সাহস করতে পারেননি। পরীক্ষা শুরু হয় চার ঘণ্টা দেরিতে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন কী করে সেটাই দেখার বিষয়।

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল প্রথম আলোকে বলেন, ঠিকাদারের বোকামির কারণে এ সমস্যা হয়েছে। তবে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সমাধান করা হচ্ছে।