চবি শিক্ষককে হুমকি, এরপর দুঃখ প্রকাশ ছাত্রলীগ কর্মীর

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক মো. তানবীর হাসানকে ফোন করে মারধরের হুমকি দিয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী রাজু মুন্সী। এ ঘটনায় এই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে রাজু ওই শিক্ষকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

ওই ফোনালাপের রেকর্ড প্রথম আলোর কাছে আছে। ওই ফোনালাপে রাজু মুন্সী বলেছেন, তিনি এই শিক্ষককে মারধর করার জন্য টাকা পেয়েছেন। এই শিক্ষকের বিভাগে তালা লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।

আজ সোমবার বেলা ১টা ১৬ মিনিটে তানবীর হাসানকে ফোন করেন ছাত্রলীগ কর্মী রাজু মুন্সী। এরপর হুমকির বিষয়ে মো. তানবীর হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়াকে লিখিত অভিযোগ দেন।

তানবীর হাসান প্রথম আলোকে বলেন, চার মাস আগে বাংলা বিভাগের একটি বর্ষের পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। সেখানে এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় নকল করার সময় হাতেনাতে ধরেন। পরে নিয়ম অনুযায়ী ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রাজু মুন্সী আজ ফোন করার পরে ওই ছেলেকে নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের কাছে তাঁর কাছে আসেন। এসে আপত্তিকর কথা বলেন।

রাজু মুন্সী অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের অনুসারী। ইকবাল হোসেন আবার সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।
শিক্ষককে হুমকির বিষয়ে রাজু মুন্সী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এক জুনিয়রের নকল ধরেছিলেন ওই শিক্ষক। এটা নিয়ে একটু মাথা খারাপ ছিল। পরে দুর্ব্যবহারের জন্য সরি বলেছি।’ আর ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এই বিষয়ে কিছু জানেন না, খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষককে হুমকির বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজু মুন্সীসহ আরও কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধে করে দেওয়ার অভিযোগ দিয়েছিলেন এক ঠিকাদার। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের নির্মাণাধীন একটি ভবনে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তখন রাজু মুন্সী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘তিনি ওই সাইটে ঘুরতে গিয়েছিলেন।’ তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এখানেই শেষ নয়। রেলওয়ের কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ২০১৩ সালের ২৪ জুন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী ওরফে বাবর এবং ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল আলম ওরফে লিমনের অনুসারী নেতা-কর্মীদের মধ্যে চট্টগ্রামের সিআরবি (রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর) এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে প্রাণ হারান যুবলীগের কর্মী সাজু পালিত (২৮) এবং শিশু মো. আরমান (৮)। এ ঘটনায় প্রথমে পুলিশ বাদী হয়ে ও পরে নিহত সাজু পালিতের মা মিনতি পালিত মামলা করেন। রাজু মুন্সী এ মামলার আসামি হয়ে জেল খেটেছিলেন। পরে জামিনে মুক্তি পান। মামলাটি এখন বিচারাধীন।