চলচ্চিত্র আমার চিন্তার চিত্রায়ণ: অপর্ণা সেন

অপর্ণা সেন
অপর্ণা সেন

অপর্ণা সেন কাল বিকেলে মন খুলে কথা বলেছেন সংবাদকর্মীদের সঙ্গে। তাঁর সর্বশেষ নির্মিত চলচ্চিত্র ছিল সোনাটা। এর প্রদর্শনী ছিল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে। কথোপকথনের একপর্যায়ে উঠে আসে তাঁর আত্মীয় কবি জীবনানন্দ দাশের প্রসঙ্গ। অপর্ণা বলেন, ‘তাঁকে মিলু কাকা বলে ডাকতাম। তবে সেই ছোটটি থেকে জীবনানন্দ দাশকে আত্মীয় হিসেবে না ভেবে কবি হিসেবেই ভেবেছি। আজও তাই। বাংলা কবিতার কী যে বাঁকবদল তিনি করেছিলেন, তা ভাবলেই অবাক হই।’

জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে আনুষ্ঠানিক কথোপকথনের দিনে যৌথভাবে চলচ্চিত্র আদান-প্রদান এবং নির্মাণ বিষয়ে বলেন, ‘রাষ্ট্র এবং রাজ্য বলেই হয়তো যৌথভাবে কাজ করার বাধাটা থেকেই যাচ্ছে। দুই রাষ্ট্রপর্যায়ের আলোচনায় সমাধান হতে পারে সমস্যার।’

বাংলাদেশের সিনেমা হলে হিন্দি ছবি প্রদর্শনে উদ্বেগ যথার্থ জানিয়ে অপর্ণা বলেন, ‘রাষ্ট্র এবং রাজ্যের বাধা কাটিয়ে বাংলা ছবি আদান-প্রদানের পথ বের করলে সবচেয়ে ভালো হয়। আমি যত দূর জানি, দুই দেশের চলচ্চিত্র আদান-প্রদানের বাধার মধ্যে রয়েছে আমাদের দেশের বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্র নেওয়ার জায়গাটি। দেখি এ জায়গাটায় আমি ব্যক্তিগতভাবে কী করতে পারি?’

এ সময় চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে নিজ ভাবনা, বর্তমানে চলচ্চিত্রের অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন অপর্ণা। বলেন, ১৪ বছর বয়সে অভিনয় শুরু করলেও চার বছর পড়াশোনার জন্য বিরতি দিয়ে পুনরায় চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এরপর ‘অপরিচিত’, ‘বাক্স বদল’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

একটি প্রশ্ন ছিল অপর্ণার কাছে, ‘ইতি মৃণালিনী’ কি আপনি? আপনার ব্যক্তিচিন্তা এবং জীবন এতে চিত্রিত হয়েছে?’ কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের অপর্ণা বলেন, ‘এ ধরনের প্রশ্ন খুব একটা পছন্দ নয় আমার। তারপরও বলছি, আমার প্রতিটি চলচ্চিত্রই আমি। ব্যক্তিগত উপলব্ধি না হলে সত্যবর্তী হওয়া যায় না। শুধু এটুকু বলব, হ্যাঁ আমি মৃণালিনী। আবার আমি মৃণালিনী নই। আমার চিন্তার চিত্রায়ণ চলচ্চিত্রটি, সে ক্ষেত্রে আমি মৃণালিনী। প্রতিটি নির্দেশকের নিজের ভাবনাই চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত হয়। না হলে সেটা তাঁর ব্যর্থতা। অন্যদিকে এ ছবির সঙ্গে আমার জীবনের মিল নেই। হ্যাঁ, এ চরিত্র প্রেসিডেন্সিতে পড়ে। আমিও পড়েছি। এটুকু ছাড়া আর কোনো মিল নেই। চলচ্চিত্রের চরিত্র আত্মহত্যা করতে চেয়েছে। আমার কখনো আত্মহত্যার ইচ্ছাও হয়নি। আমার কোনো নকশাল প্রেমিক ছিল না। বরং আমি হয়তো কোনো একসময় কিছুটা নকশালপন্থী ছিলাম।’

ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ের চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ বলে তুলে ধরার এ ধরনের প্রয়াস প্রসঙ্গে ওঠা প্রশ্নে অপর্ণা বলেন, ‘যে ছবিগুলোর কথা বললেন তা আমার দেখা হয়নি। তাই মন্তব্য করা বোকামি। তবে আমার চলচ্চিত্রে কখনো এ রকম হয়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যে সম্পর্ক তা যেমন ভাষার মিল, তেমনি হৃদয়ের টানও ছিল। ফলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের যে ধারণা তা ভারতের সমস্ত পর্যায়ে একরকম না থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।’ 

ঘণ্টাখানেক কথোপকথন শেষে গণগ্রন্থাগারে শুরু হলো সোনাটা। দর্শকের সঙ্গে বসে নিজের ছবিটি দেখলেন, ছবি শেষে দর্শকের সঙ্গে কথাও বললেন।