চসিকে প্রশাসকের সময়েও জায়গা বরাদ্দে ঘনিষ্ঠদের প্রাধান্য

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভবন
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সময় সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ পেয়েছিলেন সরকার-সমর্থক নেতা ও মেয়রের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। এর ব্যতিক্রম হয়নি সাবেক প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনের সময়েও। তাঁর আমলে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২টি জায়গা ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টিই পেয়েছেন দলীয় লোকজন ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা প্রশাসকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

সাবেক প্রশাসকের আমলে জায়গা ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়ার অনিয়ম তদন্তে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বর্তমান মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। গত ২৫ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের তৃতীয় সাধারণ সভায় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে এখনো কমিটি গঠন করা হয়নি।

এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়েই মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে জায়গা ইজারায় অনিয়ম তদন্তে মাঠে নেমেছিলেন। তদন্ত কমিটিও বিভিন্ন অনিয়ম খুঁজে পেয়েছিল। ওই সময় ৪১টি জায়গা সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ৩৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

প্রশাসকের সময় জায়গা পেলেন যাঁরা

গত বছরের ৬ আগস্ট সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন শুরু করেছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। তাঁর আমলে নগরের ১২টি জায়গা ১০ জনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দ দেওয়া জায়গার পরিমাণ ১৭ হাজার ১৮৮ বর্গফুট। একেক এলাকায় একেক দর বা ভাড়ায় এসব জায়গা ইজারা দেওয়া হয়। গত ‌১ ফেব্রুয়ারি প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হয়। নতুন মেয়র ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের বরাদ্দসংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা কমিটি এসব জায়গা বরাদ্দ দেয়।

সাবেক প্রশাসকের আমলে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া ১০ জনের মধ্যে ৪ জন সরাসরি সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের মধ্যে আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য খলিলুর রহমান, চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য লিটন মহাজন ও সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জানে আলম। এ ছাড়া ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহেদ আহমেদ চৌধুরী ছেলে ও স্ত্রীর নামে জায়গা বরাদ্দ নিয়েছেন।

জানতে চাইলে খলিলুর রহমান ও লিটন মহাজন প্রথম আলোকে বলেন, জায়গা ইজারা পাওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয় কোনো ভূমিকা রাখেনি। সর্বোচ্চ দর দিয়েই তাঁরা বরাদ্দ পেয়েছেন।

বরাদ্দ পাওয়া অন্য ব্যক্তিরা হলেন মো. শাহজাহান চৌধুরী, নঈম উদ্দিন শাহ, মো. বাদশা, দিদারুল ইসলাম, আকতার হোসেন ও রাবেয়া বেগম।
করপোরেশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জায়গাগুলো বেদখলে ছিল। উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর তা পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদনকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতাকে জায়গা ইজারা দেওয়া হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। এখনো তিনি দায়িত্বে আছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক প্রশাসকের আমলে বিভিন্ন খালি জায়গা বরাদ্দ নিয়ে সাধারণ সভায় কথা উঠেছিল। তাই একটা কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মেয়র-প্রশাসকের পাল্টাপাল্টি মন্তব্য

জায়গা ইজারা দেওয়া প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, এসব জায়গা দীর্ঘদিন ধরে বেদখলে ছিল। জায়গাগুলো উদ্ধার করে করপোরেশনের আয় বাড়াতে এবং আবার যাতে বেদখল না হয়, সে জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অস্থায়ী ভিত্তিতে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি।

ঘনিষ্ঠজনদের জায়গা ইজারা প্রসঙ্গে খোরশেদ আলম বলেন, জায়গা তিনি ইজারা দেননি। জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে সিটি করপোরেশনের বরাদ্দসংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা কমিটি।
তদন্ত কমিটি গঠন প্রসঙ্গে খোরশেদ আলম বলেন, প্রশাসক থাকার সময় দিনরাত কাজ করে নগরবাসীর আস্থা ও সুনাম অর্জন করেছেন। এতে কিছু মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে ও সুনাম নষ্ট করতে এ ধরনের কমিটি গঠন করেছে। এখন সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না মানুষ। এই ব্যর্থতা আড়াল করতে তদন্ত কমিটি গঠনের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।

সাবেক প্রশাসকের দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের ‌‌প্রশ্নই আসে না। আর ওনার (প্রশাসক) গঠনগত কোনো সাফল্য নেই। তিনি এমন কোনো দৃশ্যমান কাজও করেননি। আর সিটি করপোরেশন কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা জায়গা নয়। তাই ব্যক্তিগত হিংসা-ঈর্ষার প্রশ্ন আসার সুযোগ নেই।’

নির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও কমিটি গঠন প্রসঙ্গে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সাবেক প্রশাসকের আমলে জায়গা বরাদ্দের প্রক্রিয়া নিয়ে কানাঘুষা রয়েছে। এ নিয়ে বর্তমান পরিষদ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। এ বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব জায়গা আইন মেনে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কি না এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না, তা কমিটি যাচাই করে দেখবে। কমিটির প্রতিবেদনের পর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।