চাকরির প্রস্তুতিতে হতে হবে পরিশ্রমী ও কৌশলী

দ্রুত শেষ করার চিন্তা না করে সময় নিয়ে পড়তে হবে, তবে সাফল্য আসবে। ছবি: সংগৃহীত
দ্রুত শেষ করার চিন্তা না করে সময় নিয়ে পড়তে হবে, তবে সাফল্য আসবে। ছবি: সংগৃহীত

বদলে গেছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ধরন। তাই এ প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকতে বদলাতে হবে নিজেকেও। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আর তাহলেই আসবে সাফল্য। এখনকার সময়গুলোতে পরীক্ষা হচ্ছে ফ্যাকাল্টি বেইজড আর যদি পড়তে থাকেন গতানুগতিক, তাহলে যেকোনো পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতেই পাস করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে, পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্যাকাল্টি বেইজড প্রশ্নও পড়তে হবে। যেমন আইবিএ, বুয়েট, আর্টস ফ্যাকাল্টির বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালো করে আগে পড়ে নিতে হবে একটা ধারণার জন্য। এরপর গতানুগতিক ধারায় পড়া চালিয়ে যেতে হবে। শর্টকাট প্রস্তুতি বা দু–একটা ডাইজেস্ট পড়ে বেশি দূর যাওয়া যায় না। পড়তে হবে মূল বই। এর সঙ্গে বিষয় ও ধারণাগুলো পরিষ্কার থাকাটাও জরুরি।

অনেকেই চাকরির জন্য শর্টকাট পড়তে গিয়ে ছোট একটা চাকরি পেতেই দীর্ঘ সময় কাটিয়ে ফেলেন। এতে হতাশা বেড়ে যায় আরও। প্রথমে সামর্থ্য অনুযায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী পড়া চালিয়ে যেতে হয়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে প্রতিনিয়ত। কিছুদিন সময় দিয়ে মূল বই ও বেসিক বই আগে পড়ে ফেলতে হবে। এরপর বাজারের গতানুগতিক বই পড়া শুরু করাটাই ভালো।

বর্তমানে সাধারণত বিসিএস বাদে অন্য পরীক্ষাগুলোয় যে ধরনের প্রশ্ন আসে—
১. সেকশন এ: বাংলা (১৫-১৮ টি) প্রশ্ন
২. সেকশন বি: ইংরেজি (১৫-১৬টি) প্রশ্ন
৩. সেকশন সি: গণিত (২০-২২ টি প্রশ্ন)
৪. সেকশন ডি: সাধারণ জ্ঞান (২০-২২টি) ও কম্পিউটার (৮-১০টি) প্রশ্ন আসে।

বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি কম্পিউটারের ওপর জোর বেশি দিতে হবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য। ছবি: সংগৃহীত
বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি কম্পিউটারের ওপর জোর বেশি দিতে হবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য। ছবি: সংগৃহীত

সঠিক দিকনির্দেশনা, পরিশ্রম ও বেসিক ক্লিয়ার না থাকলে প্রিলিমিনারিতে পাস করা সম্ভব নয় অথবা অনেকটাই জটিল হয়ে যাবে, যেটা আমরা দেখেছি ৪০তম বিসিএসে। প্রিলিমিনারি মানে শুধু মুখস্থ বিদ্যা নয়, অবলম্বন করতে হবে কিছু টেকনিক আর সঠিক দক্ষতা। তাহলেই এ যাত্রাই পার। বনে দুটি প্রাণী আছে, একটি ১৮ ঘণ্টা ঘুমায় (সিংহ), আর একটি ১৮ ঘণ্টা কাজ করে (গাধা), বনের রাজা কিন্তু প্রথমজনই। সুতরাং যেটুকু দরকার, সেটুকু গুছিয়ে ভালো করে পড়ুন। তবে হ্যাঁ, কোন বই কীভাবে পড়বেন, সেটা একটা বড় ব্যাপার। তাই সঠিক তথ্যের বই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর ওপর নির্ভর করে পরীক্ষার কক্ষে যাওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের। সামনে ৪১তম বিসিএস, দুদকের সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, কম্বাইন্ড ব্যাংকের অফিসারের পরীক্ষা রয়েছে। এসব পরীক্ষা সব পরীক্ষার্থীর জন্য সম্ভাবনার ক্ষেত্র। সময়টাকে কাজে লাগানো শুরু করতে হবে এখনই। মনে রাখতে হবে, শর্টকাটে বিসিএস প্রিলিমিনারি পার করা যাবে না, তবে শর্ট টেকনিক অবলম্বন করা যেতে পারে।

বেশি বই পড়ে মনে না রাখার চেয়ে ভালো মানের অল্প বই বারবার পড়লে মেমোরাইজ জোন তৈরি হবে, মনে থাকবে বেশি। ছবি: সংগৃহীত
বেশি বই পড়ে মনে না রাখার চেয়ে ভালো মানের অল্প বই বারবার পড়লে মেমোরাইজ জোন তৈরি হবে, মনে থাকবে বেশি। ছবি: সংগৃহীত

কীভাবে পড়তে হবে
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, কীভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি কম্পিউটারের ওপর জোর দিন বেশি। মুখস্থ নয়, পড়তে হবে বুঝে। দ্রুত অধ্যায় শেষ করার চিন্তা না করে সময় দিয়ে মনে রাখার চেষ্টা করতে হবে বেশি বেশি। প্রতিটি বিষয়কে আলাদা সময়ের স্লটে ভাগ করে নিতে হবে। নিজের সময়, সুযোগ ও সাধ্যমতো একটা প্ল্যান করে পড়তে হবে। আর কেউ যদি চাকরির পাশাপাশি প্রস্তুতি নিতে চান। পুরো অবসর সময় সম্পূর্ণ কাজে লাগাতে হবে। পড়তে থাকলে একসময় অন্যদের সঙ্গে ব্যালেন্স হয়ে যাবে। বেসিক ক্লিয়ার করে বই পড়লে, জয় হবেই। বেশি বই পড়ে, মনে না রাখার চেয়ে ভালো মানের অল্প বই বারবার পড়লে মেমোরাইজ জোন তৈরি হবে, মনে থাকবে বেশি। মনে রাখতে হবে, একটি ভালো বই ও পরিশ্রম বদলে দিতে পারে সম্ভাবনার দুয়ার। তাই নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রেখে শুরু করতে হবে। সাফল্য আপনার কাছে ধরা দিতে বাধ্য।

লেখক: সহকারী প্রকৌশলী (আইটি), সোনালী ব্যাংক লিমিটেড