চালু আছে উবার সেবা, আলোচনায় সমাধান চায় কর্তৃপক্ষ
সরকার ও প্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করতে চায় উবার কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, ডিজিটাল লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উবার সরকারকে সহযোগিতা করতে চায়। অন্যদিকে, প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা দেওয়া যাবে না, এটা মানা যায় না। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) নীতিমালা অনেক পুরোনো। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবা দেওয়ার বিষয়টি এই নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার এখনই সময়।
অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে উবার অবৈধ বলা হলেও এখন পর্যন্ত ঢাকায় এই সেবা বন্ধ হয়নি। অনেকেই উবার ব্যবহার করে ট্যাক্সিসেবা নিচ্ছেন। উবার কর্তৃপক্ষ এখনো সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু না করলেও শিগগিরই তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগ নেবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছে। ঢাকায় উবারের সেবাকে ইতিমধ্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ।
বাংলাদেশে উবারের একজন মুখপাত্র মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল লক্ষ্যমাত্রায় তাল মিলিয়ে উবার সরকারকে সহযোগিতা করতে চায়। উবার চায় সরকার ও প্রযুক্তি খাত–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান। সরকার ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ ও সম্পৃক্ততার মাধ্যমে দেশের শহরগুলোতে এ সেবা চালু করতে চান তারা।
অবশ্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল শনিবার বলেছেন, বাংলাদেশের উবার সেবা বন্ধের কোনো ইচ্ছে নেই। সরকার এর বিপক্ষেও নয়। দেশের প্রচলিত আইন মেনে এই সেবা চালু করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইনভিত্তিক পরিবহন সেবাদাতা নেটওয়ার্ক উবার বাংলাদেশে তাদের সেবা চালু করে। এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকায় স্মার্টফোন অ্যাপভিত্তিক এই ট্যাক্সিসেবাকে অবৈধ ঘোষণা করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিআরটিএ। ২৫ নভেম্বর সংস্থাটি এ–সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. নুরুল ইসলামের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে।
এ সেবা অবৈধ ঘোষণা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তফা জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, বিআরটিএ তাদের নীতিমালা মেনে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাদের যে নীতিমালা তা পুরোনো। ওই নীতিমালা করার সময় প্রযুক্তি নিয়ে তারা চিন্তাভাবনাই করেননি। তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা ইস্যুতে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নেওয়া ভালো। তবে অ্যাপের মাধ্যমে সেবা দেওয়া যাবে না, তা মেনে নেওয়া যায় না। অ্যাপের মাধ্যমে কেমন সেবা দেওয়া যায়, তা এখন স্পষ্ট। ডিজিটালাইজেশনের জন্য এবং যাত্রী পরিসেবা আরও বৃদ্ধি করার জন্য এ আইন সংশোধন করা উচিত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনা হয়ে থাকে ‘ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন-২০১০’ অনুযায়ী। কোনো কোম্পানি ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনা করলে তাকে অবশ্যই বিআরটিএর মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। ভাড়ায় চালিত বা রেন্ট-এ–কার হিসেবে পরিচালিত মোটরকার ও মাইক্রোবাস পৃথক সিরিজে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এ ছাড়া মোটরযান বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিটি মোটরকার ও মাইক্রোবাসের পৃথক রং (কালো বডি ও হলুদ টপ) থাকা এবং মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় রুট পারমিট গ্রহণ বাধ্যতামূলক। বিআরটিএ তথা সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস পরিচালনা করা সম্পূর্ণ বেআইনি, অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, অনলাইনভিত্তিক ট্যাক্সিসেবা উবার সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এ ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য উবারের মালিক ও চালকদের অনুরোধ জানান বিআরটিএ। অন্যথায়, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করেন। এই সেবার জন্য উবারের নিজস্ব কোনো ট্যাক্সি নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি আছে, এমন যে–কেউ অ্যাপ ডাউনলোড করে ই-মেইল ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধনের মাধ্যমে উবারের চালক হয়ে যেতে পারেন। একই অ্যাপ ব্যবহার করে সেবা নেন যাত্রীরা।
অবশ্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও ঢাকায় এখন পর্যন্ত উবারের সেবা চালু রয়েছে। তাদের অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকেরা ঢাকায় যাতায়াতের জন্য গাড়ির চাহিদা জানাতে পারছেন। কখন এ সেবা বন্ধ কিংবা চালু থাকায় কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা জানার জন্য বিআরটিএর পরিচালক মো. নুরুল ইসলামের মুঠোফোন নম্বরে কয়েকবার কল, এসএমএস ও অফিসের টেলিফোন নম্বরে কল করা হলেও তাতে সাড়া দেননি তিনি।
গতকাল রাতে উবার সেবা ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌঁছান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত আইউব রূপক। তিনি পান্থপথ থেকে ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত যান। তাঁর ভাড়া পড়ে ২৭৫ টাকা।
উবারের অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকায় যাত্রীদের সেবা দিচ্ছেন এমন একজন গাড়িচালকের সঙ্গে কথা হয় গতকাল রাতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গাড়িচালক জানান, উবারের কিছু প্রতিনিধি গাড়ির মালিক ও চালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সেবার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। যেসব গাড়িচালক ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তাঁদের অ্যাপ ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয় প্রতিষ্ঠানটি এবং পরবর্তীতে নিবন্ধন করে নেয়।
‘ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন-২০১০’ নীতিমালার ‘ক’ অনুচ্ছেদের ১২তম ধারায় বলা হয়েছে, ট্যাক্সিক্যাবকে অবশ্যই কোম্পানিভিত্তিক পরিচালনা করতে হবে। একই অনুচ্ছেদের ১১তম ধারায় ট্যাক্সিক্যাব কোম্পানির নিজস্ব রেডিও টেলিফোন লিংক, সেলফোন ও জিপিএসের ব্যবস্থাসংবলিত কন্ট্রোল রুম থাকার কথা বলা হলেও অ্যাপের কথা উল্লেখ করা হয়নি।