চিকিৎসক ও পুলিশের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি

লকডাউনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ব্যক্তিগত গাড়িতে থাকা বিএসএমএমইউ-এর চিকিৎসকের পরিচয়পত্র দেখতে চান পুলিশ সদস্যরা। এ সময় উত্তেজিত হয়ে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। রোববার এলিফ্যান্ট রোডে
ছবি: দীপু মালাকার

করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নের সময় মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক সাঈদা শওকত অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

রোববার এলিফ্যান্ট রোডের নিরাপত্তাচৌকিতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এই বিবৃতি দিল। ওই দিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ এক চিকিৎসকের গাড়ি আটকে পরিচয়পত্র দেখতে চান। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে ধারণ করা একটি ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে চিকিৎসককে উত্তেজিত ভঙ্গিতে কথা বলতে শোনা যায়। দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুটি পক্ষ তৈরি হয়।

একটি পক্ষের দাবি, চিকিৎসককে ইচ্ছা করে হয়রানি করা হয়েছে। তাঁর গাড়িতে লকডাউনের সময় হাসপাতালে কাজ করার আদেশনামা ছিল, পরনে অ্যাপ্রোন ছিল এবং গাড়িতে হাসপাতালের স্টিকার লাগানো ছিল। অন্য পক্ষের দাবি, চিকিৎসক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করেছেন এবং গালি দিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে অ্যাসোসিয়েশন নিজ মন্ত্রণালয়ের বৈধ আদেশ লঙ্ঘন এবং ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বিবৃতিতে সই করেছেন অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এবং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম।

অন্যদিকে চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে এলিফ্যান্ট রোডে চিকিৎসককে হেনস্তায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ জানায় সংগঠনটি।

বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং মহাসচিব মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী ওই চিঠিতে সই করেছেন। তাঁরা লিখেছেন, চিকিৎসকের গাড়িতে প্রতিষ্ঠানের স্টিকার লাগানো ছিল এবং পরনে তাঁর নাম লেখা গাউন ছিল। নিজের পরিচয় দেওয়ার পরও তাঁকে আক্রমণাত্মক জেরা করে উত্ত্যক্ত ও হেনস্তা করা হয়। ওই দৃশ্য সারা দেশের মানুষ দেখেছে।

বিএমএ চিঠিতে আরও লিখেছে, ‘চিকিৎসকের এতগুলো পরিচয় দেওয়ার পরও কেবল মুভমেন্ট পাস ও প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ডের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এহেন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। সচিবালয় কিংবা পুলিশ কিংবা সাংবাদিক লেখা স্টিকারযুক্ত কোনো গাড়ি কোথাও আটকানো হয়েছে বা থামানো হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত কোনো নজির নেই।’ বিএমএ মনে করে, লকডাউনে করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থলে যাওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হয়রানি করছে। এই নিগ্রহের কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আতঙ্কগ্রস্ত ও হতাশ হয়ে পড়ছেন।

লকডাউনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ব্যক্তিগত গাড়িতে থাকা বিএসএমএমইউ-এর চিকিৎসকের পরিচয়পত্র দেখতে চান পুলিশ সদস্যরা। এ সময় উত্তেজিত হয়ে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। রোববার এলিফ্যান্ট রোডে
ছবি: দীপু মালাকার

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ) সোমবার প্রতিকার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে বিডিএফ পুরো ঘটনার খণ্ডচিত্র কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে ভাইরাল করেছে, তার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসকেরা যেন নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে যেতে পারেন, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছে। বিবৃতি দিয়েছে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) শাখাও।

সোমবার পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন তাদের বিবৃতিতে বলেছে, জনৈক চিকিৎসকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁকে পরিচয়পত্র দেখাতে বলা হয়েছিল। এ সময় তিনি অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এই আচরণ একজন পেশাদার ও সচেতন নাগরিকের কাছে কাম্য নয়। তিনি শুধু ওই পুলিশ সদস্যদের অপমান করেননি, গোটা পুলিশ বাহিনীকে কটাক্ষ ও হেয় করেছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপনে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসাসেবাসহ অন্যান্য কাজে জড়িত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দাপ্তরিক পরিচয়পত্র আবশ্যিকভাবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তিনি ওই নির্দেশনা অমান্য করেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পরিচয় না দিয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘন করেছেন।

পুলিশ বলেছে, করোনায় এখন পর্যন্ত ৯১ জন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ মানুষের জীবন রক্ষায় দাবদাহ উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। এই পরিস্থিতিতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। দেশের স্বার্থে, মানুষের জীবন রক্ষায় ও করোনা বিভীষিকা থেকে মুক্তি পেতে পুলিশের কাজে সবাই সহযোগিতা করবেন বলেও তাঁরা আশা প্রকাশ করেছেন।