চিকিৎসাও নেবেন না আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা

এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে পলিথিনের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। চিকিৎসা না নেওয়ার সিদ্ধান্তে স্যালাইন খুলে রেখেছেন। ছবি: সুহাদা আফরিন
এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে পলিথিনের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। চিকিৎসা না নেওয়ার সিদ্ধান্তে স্যালাইন খুলে রেখেছেন। ছবি: সুহাদা আফরিন

আমরণ অনশনের আজ ১০ দিন। এত দিন স্যালাইন ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও আজ থেকে আন্দোলনরত নন-এমপিও শিক্ষকেরা চিকিৎসাসেবা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সাদা পলিথিনের নিচে ঠাঁই নিয়ে নিয়েছেন শিক্ষকেরা। কেউ কেউ পাশের পদচারী-সেতুতে আশ্রয় নিয়েছেন। পলিথিনের নিচে খুঁটিঁর সঙ্গে বাঁধা স্যালাইনগুলো খুলে রাখা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীত পাশের সড়কে অবস্থান নেওয়া এই শিক্ষকেরা বুধবার জানান, আন্দোলনে কোনো আশ্বাস না পেয়ে তাঁরা চিকিৎসা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন ধরে অনশন করছি, কোনো আশ্বাসই পাচ্ছি না। আজকে থেকে সব স্যালাইন খুলে রাখছি। চিকিৎসা নেব না। মরে লাশ হয়ে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে যাব না।’

গত ১০ জুন থেকে তাঁরা টানা অবস্থান করছেন। এর মধ্যে তাঁরা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বরাবর চিঠি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। তবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন। শিক্ষকেরা বলেন, ২৫ দিন হতে চললেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকারের কোনো পক্ষ থেকে কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

খুলনা থেকে আসা শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘এই নিয়ে ২৮ বার এসেছি। প্রতিবার বাজেট হয়, ভাবি এই বুঝি কপাল খুলল। হবে হবে করে অন্য চাকরিতেও যোগ দিইনি। ১৮ বছর ধরে এই অবস্থায় শিক্ষকতা করছি। কিন্তু কিছুই হলো না। সংসার-সন্তান ফেলে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কষ্ট করছি।’ তিনি বলেন, যদি এমপিওভুক্তি না-ই করে, তাহলে এগুলো প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার অনুমোদন দেয় কেন।

গতকাল মঙ্গলবার সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এমপিওভুক্তি কার্যক্রম খারাপ। তবে এর জন্য অর্থ বরাদ্দ আছে। এ ব্যাপারে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায় বলেন, ‘কেন খারাপ সেটা তো বলেননি। আমরা শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রেখেছি। উনি টেন্ডারবাজদের টাকা দেবেন, শিক্ষকদের টাকা দেবেন না। ওনার কথার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা ভিক্ষা চাইনি। কাজ করি, তার টাকা চেয়েছি।’ অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে বলেন, কোথায় কত টাকা দেবেন, এ ব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার উন্নয়নের জন্য এটা কোনো ভালো কার্যক্রম নয়। উপবৃত্তিতে অর্থ দেওয়া গেলে সেটা অনেক ভালো কাজ করে। শিক্ষার উন্নয়নের জন্য যদি স্কুল ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়, তা অনেক ভালো হবে। এর জবাবে এই সাধারণ সম্পাদক উল্টো প্রশ্ন রাখেন, ‘উপবৃত্তি দেবেন, ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করবেন কিন্তু শিক্ষকদের পেটে ভাত দেবেন না?’ তিনি অভিযোগ করেন, অর্থমন্ত্রীর খামখেয়ালিতেই তাঁদের এমপিওভুক্তি হচ্ছে না। এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, সংসদে তিনি অনেক বিষয়ে কথা বলেন, কিন্তু তাঁদের প্রসঙ্গে কথা বলেন না।

কুড়িগ্রাম থেকে আসা শিক্ষক মো. আবদুল কুদ্দুস বলেন, তাঁরা এখানে রাজনীতি করতে আসেননি। দাবি আদায় করতে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিলেও সরকারের অন্য পর্যায়ের লোক তাঁদের দাবি বাস্তবায়ন না করে তামাশা করে চলেছেন।

স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা এমপিওভুক্তির দাবিতে এর আগেও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচিতে নামে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অনশন করার পর প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে তারা অনশন ভঙ্গ করে ফিরে যায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা তখন তাদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু শিক্ষকেরা বলছেন, এ বছরের বাজেটে সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। বরং এমপিও নীতিমালা করে তাঁদের সংকটে ফেলে দিয়েছে। তাঁরা চাচ্ছেন, এমপিওভুক্তি করে যেন নীতিমালার কোটা পূরণের জন্য তিন বছরের মতো সময় দেওয়া হয়।