চীনা টিকা পরীক্ষার সম্মতি দিতে পারে সরকার

করোনার টিকা
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

দেশে করোনাভাইরাসের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (ট্রায়াল) নিয়ে চীনা কোম্পানি আনুই জিফেইয়ের দেওয়া প্রস্তাব গ্রহণের কথা ভাবছে সরকার। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের এক সভায় চীনা কোম্পানিটির প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার বিষয়ে মত আসে।

চীনের আনুই জিফেই গত ২ সেপ্টেম্বর তাদের উদ্ভাবিত আরভিডি-ডিমার নামের করোনাভাইরাসের টিকা পরীক্ষার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বিএসএমএমইউ) আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়। তারা বলেছে, নিজস্ব খরচে তারা টিকার পরীক্ষা চালাবে। পরীক্ষা সফল হলে বাংলাদেশে টিকার গবেষণা ও উৎপাদনের জন্য কারখানা করার উদ্যোগও নেবে।

সূত্র জানায়, সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চীনা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে পরীক্ষার ক্ষেত্রে কারিগরি দিকগুলো যথাযথভাবে যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রস্তাবটিতে সাড়া দেওয়া যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা মত দেন।

আনুই জিফেইয়ের প্রস্তাবের সর্বশেষ পরিণতি সম্পর্কে জানতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

কানাডার ম্যাগগিল ইউনিভার্সিটির অর্থায়নে পরিচালিত ওয়েবসাইট কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, চীনে আনুই জিফেই আরভিডি-ডিমার টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ করেছে। এখন প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশে তৃতীয় ধাপে পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। উজবেকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। তবে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে টিকা উৎপাদনে আগ্রহী নয় প্রতিষ্ঠানটি। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ট্র্যাকার বলছে, বিশ্বে ১৫টি টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। এগুলোর মধ্যে আনুই জিফেইয়ের আরভিডি-ডিমার টিকাটি রয়েছে। বিশ্বে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও মডার্না, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি, চীনের সিনোফার্ম ও ভারতের কোভ্যাক্সিন নামের টিকা অনুমোদন পেয়েছে।

বাংলাদেশে শর্ত

বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া গত শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে পরীক্ষার অনুমোদন পেতে আনুই জিফেইকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রস্তাব দিতে হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, আনুই জিফেইকে বেশ কিছু শর্ত মেনে বিস্তারিত প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে অন্যতম একটি হলো, আনুই জিফেই যদি পরীক্ষা করতে চায়, তাহলে চীন সরকারকে বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিতে হবে। এ সিদ্ধান্ত এল চীনা প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তাব দেওয়ার প্রায় চার মাসের মাথায়।

বিশেষজ্ঞরা আনুই জিফেইয়ের টিকা পরীক্ষার অনুমোদনে সময়ক্ষেপণের ক্ষেত্রে দুটি সমস্যার কথা বলছেন। প্রথমত, করোনার মতো নতুন মহামারির টিকা গবেষণার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে আগ্রহীরা অন্য বিকল্প দেশ খুঁজবে। দ্বিতীয়ত, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মারপ্যাঁচে পরীক্ষার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করা হলে বাংলাদেশে গবেষণার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে পারে।

যোগাযোগ করতে পারে চীনও

এর আগে চীনের টিকা উদ্ভাবন ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক তাদের টিকার পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষায় অর্থায়ন জটিলতায় সেই উদ্যোগ এগোয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চীনের সিনোভ্যাকের টিকার বিষয়টি নিয়ে টানাপোড়েনের পর এটা স্পষ্ট যে করোনা মহামারির পর টিকা এখন শুধু আর গবেষণা আর জনস্বাস্থ্যের মধ্যে সীমিত নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ভূরাজনীতি। ফলে এ বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে চীনও চাইবে আনুই জিফেইয়ের প্রস্তাবটি ভেস্তে না যাক।

কূটনৈতিক সূত্রে আভাস মিলেছে, টিকার পরীক্ষার ব্যাপারে বাংলাদেশের ইতিবাচক জবাব পেতে বেইজিংয়ের রাজনৈতিক মহল খুব শিগগির ঢাকার রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে যাচ্ছে। টিকার প্রস্তাবের বিষয়টি সুরাহার জন্য এ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হতে পারে।

সার্বিক বিষয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, টিকা পরীক্ষার অনুমোদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্পষ্ট ও লিখিত একটি নীতিমালা থাকা উচিত। যাতে সবাই জানে কী প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে টিকা পরীক্ষা করা যায়। তিনি বলেন, আজ চীনারা এসেছে। সামনে রুশরা আসতে পারে। নীতিমালা লিখিত হলে ভালো হয়।