চীনের সঙ্গে বৈঠকে টিকা পেতে জোর বাংলাদেশের

জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর মজুত গড়ে তুলতে চীনা উদ্যোগে বাংলাদেশ ছাড়াও আছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল।

ছবি : রয়টার্স

করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে চীনের উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক বসছে আজ মঙ্গলবার। চীন জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর মজুত গড়ে তোলাসহ তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ জরুরি ভিত্তিতে টিকা পাওয়ার বিষয়ে জোর দেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

চীনা উদ্যোগে বাংলাদেশ ছাড়াও আছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বাকি তিন দেশ এ উদ্যোগে নেই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, মূলত গত বছরের নভেম্বর থেকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চীন দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ দেশকে নিয়ে সহযোগিতার কথা বলছে। এরপর ১৫ এপ্রিল তারা সুনির্দিষ্টভাবে তিনটি প্রস্তাব দিয়ে সহযোগিতার কথা জানায়। চীনের এই তিন প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসাসামগ্রীর মজুত গড়ে তোলা, দারিদ্র্য বিমোচনে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে চীনের সহযোগিতা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য বিমোচন।

চীনের তিনটি প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তবে বাংলাদেশের যেহেতু জরুরি ভিত্তিতে টিকার প্রয়োজন, তাই টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টিতে আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে।
মাসুদ বিন মোমেন , পররাষ্ট্রসচিব

বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের সঙ্গে চীনের এই নতুন উদ্যোগ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে তিনটি ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আজকের ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীনের তিনটি প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তবে বাংলাদেশের যেহেতু জরুরি ভিত্তিতে টিকার প্রয়োজন, তাই টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টিতে আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে।’

চীনের কাছ থেকে উপহার হিসেবে বাংলাদেশ টিকা পাচ্ছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে এবং যৌথ উৎপাদনের মাধ্যমে টিকা পাওয়া নিয়েও আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব জানান, চীন ৫ লাখ টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেবে। এ ছাড়া চীনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে টিকা বাণিজ্যিকভাবে দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। এখন পর্যন্ত চীনের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন পায়নি। তাই চীনের টিকাবিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় এসব কাগজপত্র পাওয়ার পর চীনের টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জরুরি মজুতে টিকা নেই

দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ দেশকে নিয়ে চীনের উদ্যোগ গত বছরের শেষ দিকে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য জরুরি টিকার মজুত গড়ার উদ্যোগে চীনের দেওয়া প্রস্তাবে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে।

অবশ্য গতকাল কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চীনের তিন প্রস্তাবের মধ্যে টিকার প্রসঙ্গটি নেই। সেখানে করোনা মোকাবিলায় জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী মজুতের কথা বলা হয়েছে।

ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, অনেক দর-কষাকষির পর বাংলাদেশকে ৫ লাখ টিকা উপহার হিসেবে চীন দিচ্ছে। কারণ, শুরুতে দেশটি বাংলাদেশকে ২ লাখ টিকা উপহার হিসেবে দিতে চেয়েছিল। তখন বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা বিবেচনায় সংখ্যাটি খুবই কম হিসেবে করা হয়েছিল। এরপর কয়েক দফা আলোচনা শেষে চীন উপহারের টিকা ২ লাখ থেকে ৫ লাখ করার কথা জানায়। তবে এই ৫ লাখের মধ্যে বাংলাদেশে কর্মরত চীনের ১৫ হাজার নাগরিকের জন্য ৩০ হাজার ডোজ টিকা আলাদা করে রেখে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।