চীন থেকে বাণিজ্যিক চুক্তির টিকা আসতে পারে আগামী মাসে

সিনোফার্মের করোনার টিকা
ছবি: রয়টার্স

বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় চীনের কাছ থেকে আগামী মাসেই করোনাভাইরাসের টিকা পেতে পারে বাংলাদেশ। চীনের চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ বা সিনোফার্মের কাছ থেকে ওই টিকার প্রথম চালান জুলাই মাসে হাতে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে সরকারের দেড় কোটি টিকা কেনার আলোচনা গত মাসে প্রায় শেষ করে ফেলেছিল। গত মাসের শেষ সপ্তাহে ক্রয়–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সরকারের এক অতিরিক্ত সচিব চীনের কাছ থেকে কত দামে সিনোফার্মের টিকা কেনা হচ্ছে, তা সাংবাদিকদের বলে দেন। সিনোফার্মে দামের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ায় শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমে সে দেশের সরকারের সমালোচনা শুরু হয়। কারণ, একই টিকা বাংলাদেশ কম দামে কিনছে। এ নিয়ে বিরক্ত হয়ে বাংলাদেশকে চিঠি দেয় চীন। পরে বাংলাদেশ দুঃখ প্রকাশ করলেও সিনোফার্মের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে আগস্টের মধ্যে দেড় কোটি টিকা কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। আর চীন নির্বিঘ্নে বাংলাদেশকে টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

এদিকে গত শনিবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে চীন সরকারের উপহার দেওয়া ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু। এর মাধ্যমে দেশে দ্বিতীয় পর্যায়ের গণটিকাদান শুরু হয়।

ভারতের সব জনগণকে যদি টিকা দিতে হয়, তবে এই বছরের পুরো সময়টা লাগবে। সে ক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে সেরামের টিকা পাওয়া যেতে পারে।
মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্রসচিব

বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় চীনের পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গেও এক কোটি টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, গত সপ্তাহে রাশিয়ার সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। এ ছাড়া সিনোফার্মের সঙ্গে কারিগরি যেসব সমস্যা ছিল, তা মিটে গেছে। আশা করা যাচ্ছে জুলাইতে চীন থেকে টিকা পাওয়া যাবে। তিনি জানান, সিনোফার্ম ছাড়া সিনোভ্যাক ও আনুই জিফেই নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে টিকার বিষয়ে সরকারের আলোচনা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে আনুই জিফেইয়ের সঙ্গে এক দফা আলোচনা হয়েছে। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের টিকার তৃতীয় দফা পরীক্ষা শেষ হয়নি। সে ক্ষেত্রে আনুই জিফেইয়ের কাছ থেকে যৌথ উৎপাদনের মাধ্যমে টিকা পাওয়া যেতে পারে। তবে ওই টিকা পেতে সময় লাগবে।

সেরামের টিকা এখনো অনিশ্চিত

ভারতের সেরাম ইনস্টিটউটের কাছ থেকে তিন কোটি কোভিশিল্ড টিকা কিনতে বাংলাদেশ সরকার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করেছিল। এর মধ্যে সেরাম দুই দফায় ৭০ লাখ টিকা সরবরাহের পর টিকা সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। টিকার অভাবে এখন পর্যন্ত কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বাংলাদেশের ১৫ লাখ নাগরিক দ্বিতীয় ডোজের টিকা দিতে পারছেন না।

বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় চীনের পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গেও এক কোটি টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। গত সপ্তাহে রাশিয়ার সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সেরামের টিকার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ভারতের সব জনগণকে যদি টিকা দিতে হয়, তবে এই বছরের পুরো সময়টা লাগবে। সে ক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে সেরামের টিকা পাওয়া যেতে পারে।

এদিকে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীও বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় সেরামের বাকি টিকা কবে আসবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে যুবলীগ কার্যালয়ে টিকার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘আমরা টিকা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছি, এ জন্য আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। সে সময়েই এ বিষয়ে বিবেচনা করা ভালো। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে এখনো আলোচনা চলছে।’

ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ টিকা দেওয়া হয়েছে। আশা করি টিকা উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে এটা চলমান থাকবে। কিন্তু ভারতে করোনার অবস্থা এখনো করুণ। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে ঠিক কী হবে, তা এখনই বলতে পারছি না।’