চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ সমশের আলীর বিরুদ্ধে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা বিতরণে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসন।
১৯ মার্চ ইউপি কার্যালয়ে এসে ভাতার টাকা বিতরণ করে অগ্রণী ব্যাংকের গোটাপাড়া শাখা। সে সময় ভাতাভোগীদের কাছ থেকে চেয়ারম্যান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্তে নেমে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় জেলা প্রশাসন ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে।
জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, অভিযোগ পেয়েই জেলা প্রশাসন গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করেছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ওই চেয়ারম্যান এবং তাঁর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সদরের ইউএনও, উপজেলা সমাজসেবা এবং মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
এদিকে, ওই চেয়ারম্যান তিন মাসের ছুটিতে গেছেন বলে বৃহস্পতিবার একটি আবেদন পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাগেরহাট সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তাঁর ছুটি নেওয়ার পর গোটাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান শেখ শহিদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার বাগেরহাটে স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক দাপ্তরিক পত্রে সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চেয়ারম্যান সমশের আলীর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তাৎক্ষণিকভাবে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ ইউএনও সরেজমিনে তদন্তে যান। তদন্তকালে চারজন গ্রাম পুলিশ এবং ১০ জন ভাতাভোগীর মৌখিক ও লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া আরও ১৭ জন ভাতাভোগী চেয়ারম্যানের বরুদ্ধে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন। গ্রাম পুলিশ তাঁদের বক্তব্যে চেয়ারম্যানের নির্দেশে টাকা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া তদন্ত দল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভাতাভোগীদের কাছ থেকে চেয়ারম্যানের টাকা গ্রহণের একটি ভিডিও ক্লিপ আমলে নিয়েছে।
বাগেরহাটে অগ্রণী ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক মানস কুমার পাল বলেন, ‘টাকা বিতরণে ব্যাংকের জড়িত থাকার অভিযোগ আসার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভাতাভোগীদের কাছ থেকে যে ৫০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ এসেছে, ওই টাকা আসলে গ্রাহকদের ব্যাংক হিসাবে জমা আছে। আমরা তদন্তে ব্যাংকের অনিয়মের কোনো প্রমাণ পাইনি। বাইরে কী হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের জানা নেই।’
এ বিষয়ে বাগেরহাট সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘আমরা এখনো নির্দেশনা হাতে পাইনি। চিঠি পেলে এ বিষয়ে সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফজলে এলাহী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন।’
বাগেরহাট সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘চিঠি হাতে পেলেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গোটাপাড়া ইউপির ওই চেয়ারম্যান তিন মাসের ছুটিতে যাওয়ার আবেদন করেছেন।
এসব বিষয়ে কথা বলতে ওই চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, ‘এখন ব্যস্ত আছি, পরে কথা হবে।’
গত রোববার ইউনিয়নের ১১৯ জন বয়স্ক, ১০৫ জন বিধবা ও ৬২ জন প্রতিবন্ধীর মাঝে ভাতার অর্থ বিতরণের সময় ভাতাভোগীদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ সমশের আলীর বিরুদ্ধে।
২১ মার্চ প্রথম আলোয় ইউপি চেয়ারম্যান কয়েকজন ভাতাভোগীর টাকা ফেরত দিয়েছেন এ-সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।