ছাতাতেই খিচুড়ি নিয়ে খেলেন আবদুল করিম

স্বেচ্ছাসেবকেরা যখন ডিম–খিচুড়ি দিচ্ছিলেন, তখন সেটা নেওয়ার মতো কিছুই ছিল না আবদুল করিমের কাছে। পরে হাতে থাকা ছাতাতেই নেন ডিম–খিচুড়ি
ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানি বাড়ায় গত বৃহস্পতিবার ভিটা ছাড়েন তলারকান্দির বাসিন্দা আবদুল করিম। জান বাঁচানোর তাগিদে তখন তিনি ঘর থেকে কিছুই সঙ্গে আনতে পারেননি। তবে বৃষ্টির কারণে সঙ্গে ছাতা ছিল তাঁর। সেটি নিয়েই বেরিয়ে পড়েন অজানার উদ্দেশ্যে। ওই দিন সন্ধ্যায় আশ্রয় নেন গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর ডিগ্রি কলেজে।

আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো খাদ্যসহায়তা না পাওয়ায় গত শুক্র ও শনিবার না খেয়েই কেটেছে আবদুল করিমের। পেটের জ্বালায় রোববার তাই রাস্তায় এসে দাঁড়ান পঞ্চাশোর্ধ্ব এই ব্যক্তি। সেদিন দুপুরের দিকে এক ব্যক্তি তাঁকে কিছু শুকনা খাবার দিয়েছেন বলে জানান। তাতে ছিল চিড়া, গুড় আর মুড়ি। সেটি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে খান।

আরও পড়ুন

সোমবারও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে একটি নৌকায় করে এসে দাঁড়ান সিলেট-গোয়াইনঘাট সড়কের পাশে। উদ্দেশ্য ত্রাণ নেওয়া। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কিছুই পাননি। বিকেল চারটার দিকে সেখানে খাদ্যসহায়তা নিয়ে যায় সিলেটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। খাবার ছিল ডিম–খিচুড়ি।

স্বেচ্ছাসেবকেরা যখন ডিম–খিচুড়ি দিচ্ছিলেন, তখন সেটা নেওয়ার মতো কিছুই ছিল না আবদুল করিমের কাছে। আশপাশে তিনি পলিথিনও খোঁজেন, কিন্তু পাননি। পরে হাতে থাকা ছাতাতেই নেন ডিম–খিচুড়ি। রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়েই সেই খাবার খান।

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর–বাড়ি। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ। শুক্রবার দুপুরে গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর এলাকা থেকে তোলা
ফাইল ছবি

আবদুল করিমের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয় করেরবাড়ি নামক এলাকায়। সেখানেই খাদ্যসহায়তা দিচ্ছিলেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।

আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হারা দিন রাস্তাত উবায় (দাঁড়িয়ে) রইছি। খানির আশায় কেউর কাছতনে কোনতা পাইছি না। ইতার লাগি না খাইয়া রইছি। তারা যে সময় খানি লইয়া আইছে, হিই সময় আত (হাতে) কুনতা আছিল না। পলিথিনও খুঁজছিলাম, পাইছি না। বাদে কোনতা (কিছু) না পাইয়া ছাতাত লইছি। বেশি খিদা লাগছিল, কোনতা করার আছিল না।’

আরও পড়ুন

সেখানে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ডিম–খিচুড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন আর্ন অ্যান্ড লিভ নামের সিলেটের স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনের এক সদস্য জানান, প্রায় ৪০০ জনের জন্য আয়োজন করে আনা হয়েছিল। কিন্তু খাবারের জন্য এর চেয়েও অনেক বেশি মানুষ অপেক্ষা করছিলেন। অনেকেই খাবার না পেয়ে ফেরত গেছেন।

সেখানেই ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মির্জানি বেগম নামের এক নারী। তিনি রানীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। আশ্রয় নিয়েছেন সালুটিকর ডিগ্রি কলেজেই। ডিম–খিচুড়ি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকেরা যখন যান, তখন তাঁর কাছেও খাবার নেওয়ার মতো কিছুই ছিল না। অগত্যা হাতে সামান্য খিচুড়ি আর ডিম নিয়েই তিনি ফিরছিলেন। আবদুল করিমের সঙ্গে এ প্রতিবেদককে কথা বলতে দেখে সেখানে দাঁড়ান ওই নারী।

তারা যে সময় খানি লইয়া আইছে, হিই সময় আত (হাতে) কুনতা আছিল না। পলিথিনও খুঁজছিলাম, পাইছি না। বাদে কোনতা (কিছু) না পাইয়া ছাতাত লইছি। বেশি খিদা লাগছিল, কোনতা করার আছিল না।
আবদুল করিম

তখন নিজের অসহায়ত্বের কথা প্রতিবেদককে জানিয়ে তিনি বলেন, বাসনপত্র সব বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। সঙ্গে করে কিছুই আনতে পারেননি। পাত্রের অভাবে খিচুড়ি নিতে পারেননি। তাই শুধু একটা ডিম চেয়ে এনেছেন।

পরে প্রতিবেদকের কাছে থাকা একটি পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে ওই নারীকে সহায়তা করা হয়। তিনি দ্রুত ওই পলিথিন নিয়ে খিচুড়ি বিতরণের সাড়িতে দাঁড়ান। পরে তাঁকে আবার খিচুড়ি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন