ছিয়ানব্বইয়ের আদলে আন্দোলনে বিএনপি

কার্টুন: শিশির
কার্টুন: শিশির

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যে রকম আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছিল, এখন সেটা অনুসরণ করতে চাইছে বিএনপি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে-পরে এবং ভোটের পর বিএনপি একই ধরনের কর্মসূূচি দেওয়ার ছক কষছে বলে দলীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।

আর নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধরপাকড় অব্যাহত থাকলে দল পরিচালনা এবং পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণের একক ক্ষমতা থাকবে বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার কাছে। খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে তা গণমাধ্যমের সাহায্যে প্রচার করবেন। এর জন্য দল ও জোটের বৈঠকের প্রয়োজন হবে না।

বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা বলেছেন, তাঁরা ’৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের দেওয়া কর্মসূচির আদলে আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর টানা কর্মসূচি থাকবে।

৮ নভেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ যেভাবে আন্দোলন করেছে, যত ধরনের কর্মসূচি দিয়েছে, বিএনপিও তাই করবে।

এর পরও নির্বাচন হলে বিএনপি কী করবে—এ প্রশ্নের জবাবে তখন মওদুদ আহমদ বলেন, তাহলে সেই সরকার কোনোভাবেই স্থিতিশীল হতে পারবে না। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হবে। অসহযোগ ও হরতাল মোকাবিলা করে সরকারের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একতরফা নির্বাচন করে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। বিএনপির অধীনে ওই নির্বাচন প্রতিহত করতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধীদলীয় জোট আন্দোলন করেছে। ১৭ বছর পর আবারও দেশে প্রায় একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এবার আওয়ামী লীগ একটি একতরফা নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট নির্বাচন প্রতিহত করতে এবং নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে আন্দোলন করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগের দুই মাস এবং নির্বাচনের পরের এক মাসে আওয়ামী লীগের করা আন্দোলনের ধরন কেমন ছিল, তা দেখার জন্য তাঁরা ওই সময়ের পত্রিকা সংগ্রহ করেছেন। দেখা গেছে, ওই সময় জানুয়ারি থেকে প্রথমে একদিন ও দু-তিন দিনের হরতাল; পরে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ, অসহযোগ এবং ভোটের আগের কয়েক দিন ‘গণকারফিউ’র মতো কর্মসূচি দেওয়া হয়। ফলে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। আর ভোটের পর বিএনপি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি ছিল। সে সময় টানা অসহযোগ আন্দোলনেরও ডাক দেয় আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিরোধী দল ১৯৯৬-এর আদলে যে কর্মসূচির কথা বলছে, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। ’৯৬-এর আদলে আন্দোলন বরং ক্ষয়ক্ষতি বাড়াবে। তিনি বলেন, মানুষের জানমালের ক্ষতি করে এমন কর্মসূচি কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক কর্মসূচি হতে পারে না। তবে পাশাপাশি বিরোধী দলকে আন্দোলন করার সুযোগ দিতে হবে। বিরোধী দল যেন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারে, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

একক সিদ্ধান্ত নেবেন খালেদা: ৮ নভেম্বর রাতে বিএনপির পাঁচ নেতাকে আকস্মিক গ্রেপ্তারের পর মহাসচিবসহ দলটির বাকি নেতাদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের কেউই খালেদা জিয়ার সঙ্গে সশরীরে দেখা করতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও গ্রেপ্তার এড়াতে সেখান থেকে বের হচ্ছেন না। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারাও গ্রেপ্তার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে বিরোধী দলের নীতিনির্ধারকেরা হরতাল শেষে বসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

এ অবস্থায় একসঙ্গে বসার সুযোগ না পেলে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একাই পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকার যতই ধারপাকড় করুক না কেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১৮ দলের চলমান আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও ১৮ দলের নেতাদের যদি একসঙ্গে বসার মতো পরিস্থিতি না থাকে, তাহলে বিএনপির চেয়ারপারসন নিজেই কর্মসূচি ঠিক করবেন। সে ক্ষমতা চেয়ারপারসনকে দেওয়া হয়েছে।