ছুটি বাড়াতে রাস্তায় শ্রমিকেরা, পুলিশের গুলি–লাঠিপেটা
বিনা উসকানিতে পুলিশের বিরুদ্ধে টঙ্গীর মিলগেটে শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। আহত শ্রমিকদের সবাই হামীম গ্রুপের একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক। ঈদে ছুটি বাড়ানোর দাবিতে তাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন।
পায়ে গুলিবিদ্ধ রনি ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদে বাড়তি ছুটির দাবি নিয়ে তাঁরা কাজ বন্ধ রেখে টঙ্গী মিলগেটে জমায়েত হন। এ সময় আচমকা পুলিশ এসে শ্রমিকদের পেটাতে শুরু করে। একজনের মাথাও ফাটিয়ে ফেলে। কেন বিনা কারণে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হলো জানতে চাইলে, পুলিশ আরও মারমুখী হয়ে ওঠে, লাঠিচার্জ করে ও গুলি ছোড়ে। একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে আহত অপর দুই শ্রমিক সোহেল ও রুবেলের কাছ থেকে।
সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ঈদে সরকার তিন দিনের ছুটি দিয়েছে। ঈদে বাড়তি ছুটির আশায় তাঁরা তিনটি বন্ধের দিনে কাজ করেছেন। বাড়তি চার দিনের ছুটি চাইছিলেন শ্রমিকেরা। মালিকপক্ষ তাঁদের দাবি নাকচ করে দেয়। ঈদে তিন দিনই ছুটি থাকবে বলে ঘোষণা দেয় তারা। এতে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রেখে রাস্তায় নামেন।
কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা আলোচনা করে বাড়তি ছুটি মঞ্জুর হয়েছে কি না জানাবে। শ্রমিকেরা যখন কারখানার বাইরে অপেক্ষা করছেন, তখনই পুলিশ তাঁদের ওপর হামলা করে। আহত শ্রমিকেরা প্রথমে টঙ্গী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, পরে সেখান থেকে তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ১২ জন শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা হলেন হাসান (২৬), মামুন (২৫), রনি ইসলাম (২৪), মিজানুর রহমান (২৪), রুবেল (২২), সোহেল (২২), জাহিদুর (২৬), ইমরান (১৯), রুবেল (২৬), সাবিনা (২৫), কাঞ্চন (২২) ও সাব্বির (২৪)। বেশির ভাগ শ্রমিকেরই পায়ে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, শ্রমিকেরা বেপরোয়াভাবে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকায় তারা মৃদু প্রতিহত করেছেন। শ্রমিকদের হামলায় পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। শ্রমিকেরা ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক বন্ধ করে দিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও রবাট বুলেট ছোড়ে। তাঁরা বেশ কিছু গাড়িও ভাঙচুর করেছেন।
গতকাল দুপুরের দিকে নোয়া গাড়িতে করে আহত শ্রমিকদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে দেখা যায়। তাঁদের কাউকে কাউকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) যেতে বলা হয়েছে। আহত শ্রমিক রুবেল বলেন, ‘ছুটি চাইছিলাম। গুলি খাইছি। এখন গাঁটের টাকা দিয়া হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরি।’
হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকরা দশদিন ছুটির দাবিতে আন্দোলনে নামে। তাদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল। তারা ভাংচুর শুরু করলে পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে।