ছেলের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি

নরসিংদী শহরের মধ্য কান্দাপাড়ায় নিহত গৃহবধূ দীপ্তি ভৌমিক হত্যা মামলার দায় স্বীকার করেছে তাঁরই স্কুলপড়ুয়া ছেলে প্রিতম সাহা। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মনীষা রায়ের আদালতে সে ১৬৪ ধারায় এই জবানবন্দি দেয়।

তবে নিহত দীপ্তির পরিবারের সদস্যরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের মোড় অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার ২৬ দিনেও হত্যারহস্য বের করতে না পারায় পুলিশ প্রিতমকে পিটিয়ে ও ইলেকট্রিক শক দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করিয়েছে।

গত ৮ জুলাই দুপুরে নিজ বাড়িতে গলা কাটা অবস্থায় দীপ্তি ভৌমিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়। প্রিতম সাটিরপাড়া কালি কুমার উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মোস্তাক আহাম্মেদ বলেন, প্রিতম বিভিন্ন ধরনের নেশা করত। সব সময় উগ্র মনমানসিকতা নিয়ে থাকত। নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা যেকোনো কর্মকাণ্ড ঘটাতে পিছপা হয় না।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জবানবন্দিতে প্রিতম জানিয়েছে, ঘটনার দিন ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা ছিল প্রিতমের। বিদ্যালয় থেকে ফেরার পর মা দীপ্তি ভৌমিক (৪৭) পরীক্ষা কেমন হয়েছে জানতে চান। পরীক্ষা ভালো হয়নি জানালে প্রিতমকে গালিগালাজ করেন দীপ্তি। তিনি প্রিতমকে মারধর করেন এবং বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এতে প্রিতম উত্তেজিত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে প্রিতম রান্নাঘর থেকে বঁটি এনে গলা কেটে দীপ্তিকে হত্যা করে।

দীপ্তির স্বামী প্রদীপ সাহা শেখেরচর বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন। তাঁরা মধ্য কান্দাপাড়া এলাকার হরিপদ সাহার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। ঘটনার দিন প্রদীপ সকালে ব্যবসার কাজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।

প্রদীপ সাহা বলেন, ‘প্রিতম কোনোভাবেই তার মাকে হত্যা করতে পারে না। এ ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে আমার একমাত্র ছেলেকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রিতমকে নানাভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।’

মামলাটির বাদী ও নিহত দীপ্তির জামাতা নয়ন সাহা বলেন, ‘হত্যার ২৬ দিনেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারেনি। ওপরের চাপ কমাতেই হত্যার দায় প্রিতমের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ফরেনসিক রিপোর্ট দেখাতে হবে। একই সাথে উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হবে।’

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার (এসপি) আমেনা বেগম বলেন, হত্যাকাণ্ডের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় পাশের কক্ষে প্রিতমের দুই বন্ধু ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে সে আদালতে তা স্বীকারও করেছে। তবে ছেলের হাতে মা হত্যার বিষয়টি অভাবনীয়।

এসপি আরও বলেন, ‘ওই ঘটনায় প্রথমে চুরি, ডাকাতি, শত্রুতাসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে তদন্তে নামে পুলিশ। তবে কোনো ধরনের মোটিভেই এর রহস্য ধরা যাচ্ছিল না। সে কারণে আমরা পরিবারের সদস্যদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছিলাম। তদন্তের একপর্যায়ে প্রিতমকে সন্দেহ করি আমরা। তারপর কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করে।’