
বেইলি রোডের বাসিন্দা মো. জাকির যানজট ঠেলে ২০০ টাকা যাতায়াত ভাড়া খরচ করে জনসন রোডে এসেছেন। নতুন পাঞ্জাবি ফুটো হয়ে গেছে, রিফু করাবেন। ‘বেইলি রোডে কি তবে রিফু হয় না!’ জাকির বললেন, ‘হয়, তবে সব জায়গার কাজ এমন ভালো হয় না।’
জাকিরের সঙ্গে কথা হয় পুরান ঢাকার জনসন রোডের গিলডার্স ড্রাই ক্লিনার্সে। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক তিনি।
ফারুক বাওয়ানী নামের এক অবাঙালি ব্যবসায়ী ১৯৬০ সালে গিলডার্স ড্রাই ক্লিনার্স শুরু করেন। ঢাকার পাঁচটি এলাকায় তাদের শাখা ছিল। এখন জনসন রোড আর মতিঝিলে দুটি শাখা টিকে আছে। তবে মালিকানার হাতবদল হয়েছে। দোকানের ব্যবস্থাপক পবিত্র গাঙ্গুলী বললেন, ১৯৮২ সালে বর্তমান মালিক হুমায়ুন কবির দোকান দুটি কিনে নেন। তবে নাম আর বদলাননি।
প্রায় ৫০০ বর্গফুটের দোকানটির চেহারা পুরোনো ধাঁচের। তিন দিকে মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত চার ধাপের কাচঘেরা কাবার্ড। প্রায় সব খোপের হ্যাঙারে পরপর নানা রঙের ব্লেজার ঝুলিয়ে রাখা। নিচের দিকের কিছু খোপে পশমী শাল আর সিল্ক-বেনারসি শাড়ি। মেঝেতে জায়গায় জায়গায় প্লাস্টিক-জড়ানো কম্বল।
পবিত্র গাঙ্গুলী ৪৮ বছর ধরে এ শাখার ম্যানেজার হিসেবে আছেন। অনেক পুরোনো কথা জানা গেল তাঁর থেকে। বললেন, ‘স্বাধীনের আগে ঢাকায় বড় লন্ড্রি বলতে তো গিলডার্সই ছিল। আমাদের বলাকা শাখায় সব সময় বঙ্গবন্ধুর কাপড় ধোলাইয়ের জন্য আসত। নায়ক-নায়িকারা সব এখানে কাপড় পাঠাত।’
শুরু থেকেই দামি পোশাক এবং সিল্ক কাপড় ধোলাই, পলিশ আর রিফুর কাজ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। ধোলাই ছাড়া শুধু ইস্ত্রির ফরমাশ নেয়া হয় না। তাদের সার্ভিস চার্জ ৩০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
দোকানে কর্মচারীর সংখ্যা ৫ জন। প্রায় সবাই ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আছেন। যেমন নিত্যানন্দ মধু আছেন ২৪ বছর ধরে। পুরোনো গ্রাহকেরাও তাঁর পরিচিত। কাপড় ফেরত নিতে অনেকেই আসছেন। কুশল বিনিময়ের পর নম্বর মিলিয়ে তাঁদের প্যাকেট বুঝিয়ে দিচ্ছেন মধু। গর্ব করে বললেন, ‘আমাদের সব অর্ডার সিরিয়াল দিয়া রাখা। এত বছরেও কখনো ভুল হয় নাই।’
‘তবে ব্যবসা আর আগের মতো হয় না’, বললেন, পবিত্র গাঙ্গুলী। হিসাব দিলেন, আগে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ অর্ডার আসত। এখন গড়ে প্রতিদিন এক শ থেকে দেড় শ অর্ডার পান তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘পুরোনো সবকিছুই হারায়ে যাচ্ছে।’