জমির মালিকানা দাবি অনুকূলচন্দ্র আশ্রমের

পাবনা সদর উপজেলার হিমাইতপুরে পাবনা মানসিক হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ১৫ শতাংশ জমির মালিকানা দাবি করছেন পার্শ্ববর্তী শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ সেবাশ্রমের কর্মীরা। তাঁরা গত রোববার রাতে জমিটি দখল করেন। গতকাল বুধবার পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আশ্রমের কর্মীরা হাসপাতালের ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা ১৫ শতাংশ জমি ঠাকুরের জন্মস্থান বলে দাবি করে আসছেন। এ নিয়ে জেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা চলছে। কিন্তু গত রোববার রাতে আশ্রমের কর্মীরা জমিটি দখলে নেন। রাতেই তারা বাঁশ দিয়ে জমিটির চারদিক ঘিরে পাকা স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পরদিন বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেন। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে এলাকায় উত্তেজনা চলে। শেষমেশ পুলিশ গতকাল বিকেলে বিরোধপূর্ণ ওই জমি থেকে আশ্রমের কর্মীদের সরিয়ে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অনুকূল ঠাকুরের কর্মীদের কাছে জমির পক্ষে কাগজপত্র দেখতে চায়। কিন্তু তাঁরা দখলের পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। পরে তাঁদের দখল করা জমি থেকে সরিয়ে প্রবেশদ্বারে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত আছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন আছে।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস বলেন, আশ্রমের কর্মীরা বেশ কিছুদিন ধরে জমিটি ঠাকুরের জন্মস্থান দাবি করে আসছিলেন। এরই জেরে রাতের আঁধারে তাঁরা জমিটি দখলে নেন। হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিলে দুই পক্ষের বাগ্বিতণ্ডা হয়। অনুকূল চন্দ্রের জন্মোৎসব উপলক্ষে গত শনি, রবি ও সোমবার পাশের সেবা আশ্রমে হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হয়। এ কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আইন অনুযায়ী, আশ্রম কর্তৃপক্ষ জায়গাটি পেলে ফিরিয়ে দিতে কোনো আপত্তি নেই। তবে চর দখলের মতো জমি দখল আইনসিদ্ধ নয়।
গতকাল জানতে চাইলে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ সেবাশ্রমের সভাপতি বিমল রায় চৌধুরী বলেন, ‘জমিটি নিয়ে আদালতে মামলার রায় পাওয়ার পর দখলে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কর্মীরা কাজ করতে গেলে পুলিশ তাঁদের বের করে দিয়েছে।’ তবে মামলার রায়ের অনুলিপি আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আছে। তবে তা তিনি দেখাতে পারেননি।
পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বলেন, ‘দখলের পক্ষে আমরা আনুষ্ঠানিক কোনো কাগজপত্র পাইনি। এভাবে কেউ সরকারি সম্পত্তি দখল করতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো বলেন, ‘মামলা বা আদালতের রায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। জমির পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’