জর্দা ও গুলের মতো ধোঁয়াবিহীন এবং চর্বণযোগ্য তামাক গ্রহণের প্রবণতা পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে অনেক বেশি। দিন দিন এ ধরনের তামাক গ্রহণের প্রবণতা আরও বাড়ছে।
তামাকবিরোধী একাধিক সংস্থা ও সংগঠনের গবেষণায় দেখা গেছে, জর্দা ও গুলের কৌটায় উৎপাদনকারী হিসেবে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর বেশির ভাগের কোনো অস্তিত্ব নেই। সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল বলছে, তারা অর্ধেকের বেশি জর্দার কোম্পানির অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।
এ রকম এক পরিস্থিতিতে নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত হচ্ছে।
সামাজিক সংগঠন তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) দেশের ৯ জেলায় ৪ হাজার ৫৪৬টি পরিবারের ওপর সম্প্রতি এক জরিপ চালিয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রতি হাজারে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬৩, আর নারীর সংখ্যা ৩৭৯।
তামাকবিরোধী কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য, নীতিনির্ধারকদের মাথায় ধোঁয়াযুক্ত তামাকের ক্ষতির বিষয়টিই বেশি থাকে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিরুদ্ধে তাই প্রচারণা কম।
দুটি কারণে চর্বণযুক্ত তামাকের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা কম বলে মনে করেন তাবিনাজের আহ্বায়ক ফরিদা আখতার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই তামাক নারীরা গ্রহণ করেন; বিশেষত গ্রামীণ দরিদ্র নারী।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটালের ইপিডোমলজি বিভাগের প্রধান হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, মুখ, খাদ্যনালি, পাকস্থলী ও যকৃতের ক্যানসারের জন্য তামাক সরাসরি দায়ী। এর পাশাপাশি মূত্রনালি ও নারীদের জরায়ুর ক্যানসারে পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে তামাক।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটালের ক্যানসার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট ২০১৪ অনুযায়ী, ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশের চর্বণযোগ্য তামাক সেবনের অভ্যাস ছিল। আর পুরুষদের মধ্যে এ সংখ্যা ২১ দশমিক ৪ শতাংশ।
জর্দা-গুলের প্রতিষ্ঠান ভুয়া
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেলের (টিসিআরসি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, ২৭৫ ব্র্যান্ডের ৮৩২ ধরনের ৩ হাজার ২৬৩টি জর্দার কৌটার নমুনার মধ্যে ২৫ শতাংশে কোনো সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নেই। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী তা থাকা বাধ্যতামূলক।
তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য ইউনিয়নের বাংলাদেশ কার্যালয়ের কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, জর্দা বা গুল উৎপাদনকারী ভুয়া প্রতিষ্ঠান অজস্র। এরা কোনো নিয়মও মানে না।
তাবিনাজ সম্প্রতি দেশের ৩৮টি জেলায় জরিপ করে দেখেছে, ৬০ ভাগ গুলের কৌটায় সতর্কতা চিহ্ন নেই।
সংগঠনটির আহ্বায়ক প্রথম আলোকে বলেন, জরিপে অধিকাংশ কোম্পানির পূর্ণ কোনো ঠিকানা নেই। ঠিকানা না দেওয়ার উদ্দেশ্য, এদের যেন কেউ খুঁজে না পায়।
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি কর্মকর্তা শেখ মো. মাহবুবুস সোবহান বলেন, দুই বছর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে থেকে পাওয়া তালিকা ধরে জর্দার কোম্পানিগুলোর অনুসন্ধান করা হয়েছিল। তবে এর মধ্যে অধিকাংশ কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।