জলবায়ু পরিবর্তনসহিষ্ণু কৃষিতে গুরুত্বারোপ

এফএওর ৩৬তম এশিয়া ও প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনের প্রথম দিনে সচিব ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পর্যায়ের সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। গতকাল রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে।
ছবি: পিআইডি

একদিকে করোনা মহামারি আর অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে বেড়ে যাওয়া এই দুই সংকটের মধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে খাদ্য উৎপাদন বড় ভূমিকা রেখেছে। সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের বিপদ–আপদ থেকে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোকে রক্ষা করতে কৃষিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি খাতে উন্নত প্রযুক্তি, ডিজিটাল মাধ্যম এবং গবেষণা বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতাকে আরও সম্প্রসারণ করতে হবে।

রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার শুরু হওয়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ৩৬তম এশিয়া ও প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা। তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনসহিষ্ণু কৃষির জন্য প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল মাধ্যমকে আরও বেশি ব্যবহারের ওপরে গুরুত্ব দেন। সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এ ধরনের প্রযুক্তি বিনিময়ের ওপরে গুরুত্ব দেন তাঁরা।

বিশ্বের ৪৬টি দেশের কৃষিসচিব ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা সম্মেলনে যোগ দেন। এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। এ সময় বাংলাদেশের খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, এফএওর সহকারী মহাপরিচালক জং-জিন কিম, সম্মেলনের সচিব শ্রীধর ধর্মপুরীসহ অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, মুজিব বর্ষে বাংলাদেশে এফএওর এই সম্মেলন আয়োজন দেশের কৃষি উন্নয়নের সাফল্যে মাইলফলক হয়ে থাকবে। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর কৃষি জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের কৃষিতেও এর বিরাট প্রভাব পড়বে। এ অবস্থায় এ সম্মেলন সদস্যদেশগুলোর মধ্যে জ্ঞান, প্রযুক্তি, অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ক্ষেত্র প্রসারিত করবে ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।

এফএওর সহকারী মহাপরিচালক জং-জিন কিম তাঁর বক্তব্যে সম্মেলনে আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য চারটি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান। তিনি বলেন, শুধু উন্নত কৃষি উৎপাদন নয়, উন্নত পুষ্টি ও উন্নত পরিবেশও নিশ্চিত করতে হবে। উন্নত জীবনের জন্য কৃষিখাদ্যব্যবস্থাকে টেকসই করা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও জলবায়ুসহনশীল কৃষিখাদ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

সম্মেলনের প্রথম দিনের আলোচনার মাধ্যমে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আজ বুধবার তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে চূড়ান্ত করার জন্য উত্থাপন করা হবে। মন্ত্রীরা তা নিয়ে মতামত দিয়ে একে চূড়ান্ত করবেন। সম্মেলনের শেষ দিন তা সদস্যরাষ্ট্রগুলোর যৌথ ঘোষণা হিসেবে প্রকাশ করা হবে।

প্রথম দিনের অধিবেশনে বাংলাদেশসহ কয়েকটি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে করোনাকালে কৃষির উৎপাদনের ধারাবাহিকতা অটুট থাকার তথ্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশে লকডাউনের মধ্যে একমাত্র কৃষি খাতের উৎপাদন বেড়েছে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্য এবং উপকরণ বিক্রিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সৃজনশীল ব্যবহার বেড়েছে। তবে এর মধ্যেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও অতিবৃষ্টির প্রভাব কৃষিতে পড়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পক্ষ থেকেও এ ধরনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়।

চার দিনব্যাপী এ সম্মেলন শেষ হবে ১১ মার্চ। এ সম্মেলনে ৪৩টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৮টি দেশ সরাসরি ও ৩৫টি দেশের প্রতিনিধিরা ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিচ্ছেন। সদস্যরাষ্ট্র, এফএওর মহাপরিচালক, জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও ও সিভিল সোসাইটির প্রায় ৯০০ জন অংশগ্রহণ করছেন, যা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের সর্বোচ্চ রেকর্ড।