জামদানির চেয়ে আমদানি শাড়ির কদর বেশি

ঈদের বাজারে যাবে শাড়িটি। শেষ মুহূর্তের জরি বসানোর কাজে ব্যস্ত মিরপুরের বেনারসিপল্লির এই কারিগর ষ হাসান রাজা
ঈদের বাজারে যাবে শাড়িটি। শেষ মুহূর্তের জরি বসানোর কাজে ব্যস্ত মিরপুরের বেনারসিপল্লির এই কারিগর ষ হাসান রাজা

ছুটির দিন গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা। এদিকে পবিত্র রমজান মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গেছে। কাজেই আবহাওয়া অনুকূল না হলেও কেনাকাটায় বেরিয়ে পড়তে গড়িমসি করেননি ক্রেতারা। সকাল থেকেই বিপণিবিতানগুলো কেনাকাটায় সরগরম হয়ে ওঠে। জুমার নামাজের পর কেনাকাটায় বেরিয়ে পড়া লোকসংখ্যা বাড়তে থাকে। পথে পথে তীব্র যানজটও সৃষ্টি হয়, যা এই শহরে ঈদের আগের চিরায়ত দৃশ্যের পরিচিতি লাভ করেছে। তো সেই যানজটের সঙ্গে বৃষ্টি যোগ হওয়ায় ক্রেতাদের বিড়ম্বনাও বেড়ে যায়।
ঈদের কেনাকাটা সাধারণত শুরু হয় বাড়ির ছোট ছেলে-মেয়েদের পোশাক-আশাক দিয়ে। পুরুষদের পোশাকের মধ্যে প্রাধান্য পায় পাঞ্জাবি এবং নারীদের ক্ষেত্রে শাড়ি। বাচ্চা ও পুরুষদের পোশাকের বাজার দখল করে আছে চীনা পণ্য। শাড়ির বাজার ভারতের। দেশি জামদানি ও তাঁতের সুতি শাড়ির বিক্রি ঈদের বাজারে কিছুটা বাড়লেও বিক্রেতারা জানালেন, ঈদের বাজারে ভারতীয় শাড়ির বিক্রিই সিংহভাগ। ঈদের সময় ক্রেতারা সাধারণত উৎসব অনুষ্ঠানে পরার জন্য একটু জমকালো নকশার দামি শাড়ি পছন্দ করেন। দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো এ ধরনের কিছু শাড়ি তৈরি করলেও বাজারের চাহিদার তুলনায় তা নেহাতই অল্প।

এবার ঈদের বাজারে ভারতের যেসব শাড়ি বেশি বিকোচ্ছে, তার দাম তিন থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে। ভেলভেটের আঁচল এবং কুচি ও পাড়ে লেসের জমিনে অ্যান্টিক পাথরের কাজ করা শাড়ি এবার ক্রেতাদের প্রধান পছন্দ। এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটের জ্যোতি শাড়ির দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি মাসুদ রানা জানালেন, এসব শাড়ির দাম দুই হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ধুপিয়ান কাতান তিন হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা, জুটকোটা এক হাজার ৭০০ টাকা, বিভিন্ন ধরনের সিল্ক, জর্জেট আট হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। লেহেঙ্গা ১৬ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা।

গাউছিয়ার বিপরীত পাশে ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট মধ্যবিত্তদের পছন্দের কেনাকাটার স্থান। এই মার্কেটের শাড়ি সেন্টারের মোহাম্মদ বাবু জানালেন, বরাবরের মতো এবারও অনেক নতুন ডিজাইনের ভারতীয় শাড়ি এসেছে। এর মধ্যে আছে চিনন সিল্ক, অপেরা কাতান, হাড্ডি কাতান, বুটিকস। এসব শাড়ির দাম ছয় হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। এবারের শাড়িতে ভেলভেটের আঁচল, ভারী কাজ করা পাড় এবং পুরো জমিনে নানা রঙের পাথর ও কারচুপির কাজের প্রাধান্য পেয়েছে।

দেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ির সুবিধা হলো, সারা বছরই কিছু কিছু করে এটি বিক্রি হয়। জামদানির আবেদন চিরন্তন। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের জনতা-ফেন্সী জামদানি হাউসের মোস্তাক আহমেদ জানালেন, এবার জামদানির দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে সুতার দাম ও শ্রমিকদের মজুরি বাড়ায়। গত বছর সর্বনিম্ন ৭০০ টাকায় যে সুতি জামদানি পাওয়া গেছে, এবার তার দাম এক হাজার টাকা। জামদানির দাম নির্ধারিত হয় এর সুতা ও নকশার ওপর ভিত্তি করে। বরফি, কুচি, শেড, পানতোল—এমন হরেক রকমের নকশার জামদানি আছে। সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার জামদানি আছে এই মার্কেটে। তবে ছয় হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার ভেতরের শাড়িগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। এখানে স্ত্রীর জন্য জামদানি কিনতে এসেছিলেন রাঙামাটির মামুনুর রশীদ। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে। স্ত্রী ঈদে জামদানি শাড়ি চেয়েছেন, সে কারণেই পাঁচ হাজার টাকায় একটি শাড়ি কিনেছেন তিনি।

দেশি তাঁতের শাড়ির জন্য বেইলি রোডের টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির এবং এখানকার দোকানগুলো ক্রেতাদের কাছে বিশেষ পরিচিত। এখানে টাঙ্গাইলের সুতি শাড়ি পাওয়া যাবে সর্বনিম্ন ৬০০ টাকায়। শাড়ি কুটিরের বিক্রয় প্রতিনিধি রোজী আক্তার জানালেন, হাতের কাজ করা সুতি শাড়ির সর্বোচ্চ দাম ছয় হাজার টাকা। হাফ সিল্ক এক হাজার থেকে ছয় হাজার এবং সিল্ক তিন হাজার ৬০০ থেকে শুরু হয়ে ৩৮ হাজার টাকা পর্যন্তু। জামদানির শুরু পাঁচ হাজার থেকে; দেড় লাখ টাকার জামদানিও আছে এখানে।

দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে আড়ংয়ের সুতি শাড়ির দাম এক হাজার ৪০০ থেকে আট হাজার এবং সিল্ক তিন হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। কে-ক্রাফট, অঞ্জন’সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সুতি শাড়ি সাড়ে ৬০০ থেকে শুরু। আছে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। সিল্ক, এন্ডি এসবের শাড়ি পাওয়া যাবে পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায়।

সবার পক্ষে তো আর এত দাম দিয়ে নতুন কাপড় কেনা সাধ্যে কুলোয় না। দেশি সিল্ক-কাতানের মধ্যে মিরপুরের শাড়ির চাহিদা সারা দেশেই। ঈদ সামনে রেখে মিরপুরের কাতানের কারিগরেরা রাতদিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শাড়ির নকশা করে। 

লজ্জা নিবারণ আর ঈদের দিনে নতুন কাপড় পরার আনন্দ—উভয় কুল রক্ষা করতেই যাঁরা কেনাকাটা করতে নামেন, তাঁদের ভরসা পাবনার মোটা সুতার তাঁতের কাপড়। এটি পাওয়া যাবে তিন থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায়। প্রিন্টের শাড়ির দাম আরেকটু কম ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। ঈদের বাজারে এসব শাড়ি ‘জাকাতের শাড়ি’ বলেই পরিচিত। তবে জাকাত দেওয়ার জন্য যে কম দামের কাপড়ই কিনতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই, বরং দানের জিনিস যে উত্তম হওয়াই বাঞ্ছনীয়, তা কারই বা অজানা।