জামিন, কার্যতালিকা সবই অনলাইনে

বদলে গেছে সুপ্রিম কোর্টের কাজের ধরন। মান্ধাতার আমলের পদ্ধতির পরিবর্তে চালু হয়েছে অনলাইন-ব্যবস্থা। জামিন জালিয়াতি রোধে সুপ্রিম কোর্ট অনলাইনে চালু করেছেন জামিন নিশ্চয়তা পদ্ধতি (বেইল কনফারমেশন সিস্টেম)। এমনকি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে দৈনন্দিন কার্যতালিকা (কজলিস্ট)।
এই ব্যবস্থা চালুর ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি কমতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে বেইল কনফারমেশন পদ্ধতি চালু হওয়ায় জামিন জালিয়াতি পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। আবার অনলাইনে দৈনন্দিন কার্যতালিকা চালু হওয়ায় বছরে সরকারের ২০ কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হবে।
অনলাইনে জামিন নিশ্চয়তার পদ্ধতি: আগে হাইকোর্টে কোনো মামলার আসামি জামিন পেলে তা চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতকে জানিয়ে দিত সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ। চিঠি পাওয়ার পর বিচারিক আদালত আসামির জামিননামা গ্রহণ করে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার আগে চিঠিটি সুপ্রিম কোর্টের কি না, তা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখায় ফোন করতেন। ফোন আসত সারা বাংলাদেশের বিচারিক আদালত থেকে। অথচ ফোন ধরতেন মাত্র একজন টেলিফোন অপারেটর। লেগে থাকত ‘ফোনজট’। এ জন্য ফোনের লাইন পাওয়া ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। কখনো কখনো দুই দিন পর ফোনে লাইন পাওয়ার পর বিচারিক আদালত নিশ্চিত হতেন, চিঠিটি সুপ্রিম কোর্টের। তারপর মিলত আসামির মুক্তি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে অনলাইনে বেইল কনফারমেশন পদ্ধতি চালু হওয়ায় সেই ভোগান্তি নেই বিচারপ্রার্থীদের। এমনকি জামিন নিয়ে জালিয়াতিও বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে হাইকোর্টের প্রতিটি জামিনের আদেশ স্ক্যান করে সফটওয়্যারে আপলোড করেন অপারেটর। সফটওয়্যারটি জামিনের আদেশের বিপরীতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ওয়েব রেফারেন্স নম্বর তৈরি করে। এরপর অপারেটর ওই ওয়েব রেফারেন্স নম্বরটি জামিনের আদেশে সিল মেরে লিখে দেন। এরপর চিঠি চলে যায় বিচারিক আদালতে। ওই আদালত তাঁর প্রদত্ত ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অনলাইন সফটওয়্যারে ঢোকেন। এরপর ওয়েব রেফারেন্স নম্বর দিয়ে সংশ্লিষ্ট জামিনের আদেশ খুঁজে বের করেন। সফটওয়্যারে পাওয়া জামিনের আদেশের সঙ্গে পাঠানো চিঠির মিল থাকলে বিচারিক অধস্তন আদালত জামিননামা নিয়ে আসামি ছেড়ে দেন। ফোনে আর চিঠির সত্যতা নিরূপণ করার প্রয়োজন হয় না। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির উবায়দুল করিম আকন্দ ও ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনলাইনে বেইল কনফারমেশন পদ্ধতি চালু হওয়ায় সারা দেশের বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি দূর হয়েছে।’
অনলাইনে দৈনন্দিন কার্যতালিকা: সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগে ছাপানো দৈনন্দিন কার্যতালিকা সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন সকালবেলা সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ ও ডিক্রি বিভাগের সামনে আইনজীবীদের সহকারীদের ভিড় থাকত চোখে পড়ার মতো। সাধারণত আগের দিন সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে বেঞ্চ কর্মকর্তারা পরের দিনের কাজের তালিকার খসড়া পাঠিয়ে দেন বেঞ্চ ও ডিক্রি বিভাগে। সংশ্লিষ্ট শাখার তত্ত্বাবধায়ক তা সংগ্রহ করে ছাপানোর জন্য পাঠিয়ে দেন বিজি প্রেসে। সকালের মধ্যে ৪০০ পৃষ্ঠার দৈনন্দিন কার্যতালিকা ছাপা হয়ে যায়। প্রতিদিন একটি দৈনন্দিন কার্যতালিকা ছাপতে খরচ হয় সাড়ে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। ছাপা হয় প্রায় ২ হাজার ৬০০টি। বিজি প্রেসে রাত জেগে যাঁরা কজলিস্ট ছাপার কাজ করেন, তাঁদের বেতন ও ওভারটাইমের হিসাব বাদ দিয়েই বছর শেষে এ বাবদ খরচ দাঁড়ায় ২১ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু আইনজীবীদের কাছ থেকে এ বাবদ প্রতিবছর চাঁদা আদায় করা হয় মাত্র ২ হাজার ৫০০ টাকা।