জেলা পরিষদ আইনের তিনটি ধারা নিয়ে হাইকোর্টের রুল

নির্বাচকমণ্ডলী গঠন করে পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে জেলা পরিষদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইনের তিনটি ধারা প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল রোববার এ রুল দেন। আদালত বলেছেন, ইতিপূর্বে হওয়া একটি (১৬ বছর আগে) রুলসহ দুটি রুলের একসঙ্গে শুনানি হবে।
রুলে জেলা পরিষদ আইন ২০০০-এর ৪(২) ও ১৭ ধারা এবং ২০১৬ (সংশোধিত) আইনের ৫ ধারা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইনসচিব, স্থানীয় সরকার সচিব ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ওই তিনটি ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ গত ২৯ নভেম্বর রিট আবেদন করেন। এতে নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল স্থগিত চাওয়া হয়। গত ২০ নভেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা।
গতকাল রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল দেন আদালত। রিট আবেদনকারী ইউনুছ আলী আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।
রিট আবেদনকারীর যুক্তি, সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রশাসন পরিচালিত হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধির বিষয়ে সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদেও বলা আছে। অথচ ২০০০ সালের জেলা পরিষদ আইনের ৪(২) ও ১৭ ধারা সংবিধানের ওই দুই অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে আছে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি বাছাইয়ের কথা। অথচ জেলা পরিষদের ওই ধারায় আছে একটি নির্বাচকমণ্ডলী গঠন হবে। এখানে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। ওই আইনে ২০১৬ সালে ধারা ৫ সংশোধনী আনা হয়, রিট আবেদনে এটিও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
২০১৬ সালে সংশোধিত ৫ ধারায় বলা হয়, আগের আইনের ১৭ ধারার উপধারা (১)-এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপধারা-১ প্রতিস্থাপিত হবে বলা হয়। উপধারা (১) অনুসারে, প্রতিটি জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলরগণ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানগণ, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরগণ এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০০ সালের ৩ জুলাই জেলা পরিষদ বিল পাস হওয়ার পর জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরোক্ষ ভোটের বৈধতার প্রশ্নে বিএনপির পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন লক্ষ্মীপুর থেকে নির্বাচিত সাংসদ ও আইনজীবী খায়রুল এনাম। ২০০০ সালে পাস করা জেলা পরিষদ আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী মেয়র, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররাই এই নির্বাচনের ভোটার। ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৯ জুলাই হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল দিয়েছিলেন। ওই রিট মোকদ্দমাটি ১৬ বছর ধরে বিচারাধীন।