ঝালকাঠিতে ফোন পেলেই অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন

ঝালকাঠিতে ফোন পেয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নপূরণ সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি এইচ এম রিয়াজ খানের মুঠোফোনে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ফোন আসে। ফোনে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জানান, তাঁর মায়ের খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে।

এ কথা জেনেই রিয়াজ খান তাঁর সংগঠনের এক সদস্যকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে শহর থেকে ৮ মাইল দূরে ভৈরবপাশা গ্রামে মেহেদী হাসানের বাড়িতে ছুটে যান। তবে অক্সিজেন দেওয়ার ৭ মিনিটের মধ্যে মেহেদীর মা মারা যান।

৭ জুলাই ঝালকাঠি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মকবুল হোসেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ঢাকা থেকে তাঁর ছেলে ব্যবসায়ী মো. ফরিদুজ্জামান বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের গড়া সংগঠন মিডিয়া ফোরামের সভাপতি মনির হোসেনকে বিষয়টি জানান। সংগঠনটির সদস্যরা শিক্ষক মকবুল হোসেনের শহরের চাঁদকাঠির বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন। তাঁকে দুদিন অক্সিজেন দেওয়ার পরে তিনি এখন সুস্থ। এতে খুশি হয়ে শিক্ষকপুত্র ফরিদুজ্জামান মিডিয়া ফোরামকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে দিয়েছেন।

ঝালকাঠিতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় হাসপাতাল ও বাসাবাড়িতে যখন অক্সিজেন–সংকটে শ্বাসকষ্টে রোগী মারা যাচ্ছেন, ঠিক এমন সময় বিনা মূল্যে বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে ১০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এক ব্যক্তি। সংগঠনগুলো হলো স্বপ্নপূরণ সমাজকল্যাণ সংস্থা, মিডিয়া ফোরাম, ইয়ুথ অ্যাকশন সোসাইটির ইয়াস অক্সিজেন রেসপন্স টিম, রক্তকণিকা ফাউন্ডেশন, সিটি ক্লাব, দুরন্ত ফাউন্ডেশন, হৃদয়ে ঝালকাঠি, কানেকটিং পিপল, ফাতেমা আলী ফাউন্ডেশন ও মাওলানা আবদুল কাদের ফাউন্ডেশন। স্বেচ্ছাসেবী ওই ব্যক্তি হলেন সাগর হালদার।

সংগঠনগুলো এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন সেবা দিয়েছে। গভীর রাতেও অক্সিজেন নিয়ে রোগীর বাড়িতে যাচ্ছেন এসব সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ফোন নম্বর ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। রোগীর পরিবার সেই নম্বরে ফোন করে সাহায্যের আবেদন করলে পৌঁছে যাচ্ছে অক্সিজেন। ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে বিনা মূল্যে অক্সিজেন পেয়ে খুশি রোগী ও স্বজনেরা। রোগীর স্বজনেরা যদি খুশি হয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলের জন্য ৩৫০ টাকা দেন, তবে কিছু সংগঠন তা গ্রহণ করে।

এমন মহতী কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন ঝালকাঠির কিছু বিত্তবান সমাজসেবী ও সাধারণ মানুষ। কেউ অক্সিজেন সিলিন্ডার, আবার কেউ অক্সিজেন কনসেনট্রেটর দিয়ে সাহায্য করেছেন। কিছু সংগঠন নিজেরাও কিছু সিলিন্ডার ক্রয় করছে।

স্বপ্নপূরণ সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি এইচ এম রিয়াজ খান বলেন, প্রতিদিন অক্সিজেনের জন্য ২০ থেকে ৩০টি ফোন আসে। যেখানে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ মনে হয়, সেখানেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে চলে যান তাঁরা। তাঁদের ছয়টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে এখন পর্যন্ত ৩০ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে।

চারটি সিলিন্ডার সব সময় রোগীদের বাড়িতে থাকে বলে জানালেন মিডিয়া ফোরামের সভাপতি মনির হোসেন। ইয়ুথ অ্যাকশন সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৮টি সিলিন্ডারের মাধ্যমে ৫০ জন রোগীকে সেবা দিয়েছি। সমাজের অনেক বিত্তশালী আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে দিয়েছেন। অনেকে সুস্থ হয়েছেন। দুজন মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে সংকটের অজুহাত দেখিয়ে অনেক ব্যবসায়ী অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

করোনা সংক্রমণের এই জটিল পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো অক্সিজেন সেবা নিয়ে এগিয়ে আসায় কোভিড রোগীরা উপকৃত হচ্ছেন বলে জানালেন করোনা থেকে সুস্থ হওয়া এক ব্যক্তি। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আবুয়াল হাসান বলেন, শ্বাসকষ্টে ভোগা কোভিড রোগীদের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো মানবিক কাজ করে যাচ্ছে। এতে হাসপাতালের ওপর চাপ কমছে।