ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করছে দর্শনার্থীরা।  প্রথম আলো
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করছে দর্শনার্থীরা। প্রথম আলো

নীল ফেনিল জলরাশি। ছোট ছোট ঢেউ। একপাশে ঝাউবন। এর সঙ্গে সূর্য ডোবার অপার সৌন্দর্য। চিক চিক বালুর এ সৈকতটির নাম বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত। বিকেল হলেই অসংখ্য মানুষের পদচারণে মুখর হয় সৈকতটি।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার এ সৈকতটির পর্যটন এলাকা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি নেই। ফলে নেই পর্যটক পুলিশ। গত ২১ জুন ও ৬ জুলাই পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় এ সৈকতের সাগরে ডুবে পাঁচ তরুণের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া একটি শিল্প গ্রুপ বালু তুলে সৈকতটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ সৈকত ঘিরে স্থানীয় মানুষজনের কিছু কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা চাচ্ছেন, এই সৈকতটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। এরই মধ্যে সীতাকুণ্ড সমিতি, চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি বাঁশবাড়িয়া সাগর উপকূলকে ‘সমুদ্রসৈকত’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে পশ্চিম দিকে চান সিকদার সড়ক হয়ে বেড়িবাঁধের কাছে গেলেই এ সৈকত।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, সৈকতটির দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। এ ছাড়া কুমিরা থেকে বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত ব্লক বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শেষ হলে দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে পাঁচ কিলোমিটার।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম মনে করেন, সৈকতটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলে এলাকার যেমন উন্নয়ন হবে, তেমনি হবে কর্মসংস্থান। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসককেও জানিয়েছেন বলে জানান। সৈকতটির ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু এলাকায় পানিতে নামা নিষেধ। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। তবু কিছু তরুণ সেখানে গোসলে নামছে।

যেভাবে পরিচিতি

গত বছরের (২০১৭) নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র বাঁশবাড়িয়া-সন্দ্বীপ ফেরিঘাট দিয়ে সন্দ্বীপ থেকে সীতাকুণ্ডে আসেন। এ সময় তারা সৈকতটির ঝাউবাগান, জেলা পরিষদের ঘাটের সেতুসহ বিভিন্ন দৃশ্য ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপর থেকে সৈকতটিতে মানুষ ভিড় জমাতে থাকে। গত আট মাসের মধ্যে গড়ে ওঠে দোকানপাট। যাতায়াতের জন্য হয় গাড়ির ব্যবস্থা।

পর্যটন এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি নেই। ফলে নেই পর্যটক পুলিশ। সাম্প্রতিক দুটি ঘটনায় পাঁচ তরুণের মৃত্যু।

তবে এর আগেও সেখানে মানুষ বেড়াতে যেত। কিন্তু ওই যুবকদের ফেসবুকে প্রচারের কারণে আনাগোনা বেড়ে যায়। সম্প্রতি বাঁশবাড়িয়া সৈকতে বেড়াতে আসেন ফেনীর ছাগলনাইয়ার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক ঝর্ণা বেগম। ঝর্ণা বলেছিলেন, তিনি ফেসবুকে বাঁশবাড়িয়া সৈকতের ছবি দেখে বেড়াতে এসেছেন।

যে কারণে দুর্ঘটনা

গত ২১ জুন ও ৬ জুলাই পাঁচ তরুণ গোসলে নেমে চোরাবালিতে ডুবে মারা যান। ৭ জুলাই কোস্টগার্ডের ডুবুরিদের নেতৃত্বে থাকা চিফ পেটি অফিসার আখিরুল হাসানের কাছে দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপকূল থেকে ৫০০ মিটার দূরে খালের মুখে ৪০০ বর্গফুট প্রশস্ত, ১০০ ফুট গভীর একটি গর্ত রয়েছে। গর্তটির ওপরের অংশ বালি, পলিমাটি দিয়ে ভরাট দেখা গেলেও ভেতরটা নরম। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের কেউ কেউ ওই গর্তে পড়ে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আখিরুল হাসান বলেন, স্থানীয় লোকজন তাঁকে জানান একটি শিল্প গ্রুপের পক্ষে ওই এলাকা থেকে বালু তুলে নেওয়ার পর সেখানে গর্তের সৃষ্টি হয়। এখন সেই গর্তটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এখন ওই এলাকাটিকে বিপজ্জনক চিহ্নিত করে এর চারপাশে লাল পতাকা পুঁতে দিতে হবে। না হলে আবার দুর্ঘটনা ঘটবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেছেন, গত দুই-আড়াই মাস বালু তোলা বন্ধ রয়েছে।

গিয়াস আরও বলেন, ওই শিল্প গ্রুপটি সৈকতে নিয়মিত বালু তুলছে। ফলে ১২০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছ। যদিও এখন বর্ষার জন্য মাটি ওঠানো বন্ধ রয়েছে। তবে যন্ত্রগুলো বসানো আছে। বর্ষা থেমে গেলে আবার তোলা হবে।