টবেই ফলবে জাম্বুরা, ডেউয়া, কতবেল

বছরজুড়ে পাওয়া যাবে আমড়া। চারার মূল্য এক শ টাকা। ছবি: প্রথম আলো
বছরজুড়ে পাওয়া যাবে আমড়া। চারার মূল্য এক শ টাকা। ছবি: প্রথম আলো

সবুজ পাতাগুলোর সবই ঢেকে আছে বড় বড় জাম্বুরায়। গুনে দেখা গেলে সব মিলিয়ে ১০টি জাম্বুরা ঝুলছে গাছটিতে। জাম্বুরা গাছটি কিন্তু কোনো বাড়ির উঠানে নয়, ছিল আগারগাঁওয়ের বৃক্ষমেলার বনরূপা নার্সারির নামে একটি স্টলের ছোট টবে। বৃক্ষমেলায় গেলে ছোট-বড় টবে রাখা এমন অসংখ্য ফলদ গাছ চোখে পড়বে। কেবল জাম্বুরা নয়, কতবেল, আম, আমড়া, ডেউয়া, চালতা, করমচা, কামরাঙাভর্তি ছোট ছোট গাছও পাওয়া যাবে। নাম শুনলে জিভে পানি চলে আসা ফলভর্তি গাছগুলো রাখা আছে টবে।

ভেড়াকাটা মাল্টার গাছ। এর চারা আনা হয়েছে থাইল্যান্ড থেকে। ছবি: প্রথম আলো
ভেড়াকাটা মাল্টার গাছ। এর চারা আনা হয়েছে থাইল্যান্ড থেকে। ছবি: প্রথম আলো

বনরূপা নার্সারির বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বললেন, এই জাম্বুরার চারা টব ও জমিতে রোপণ করা যায়। যেখানেই রোপণ করা হোক না কেন, এক-দুই বছরের মধ্যে গাছে ফল ধরবে। শুরুর দিকে গোটা পাঁচেক জাম্বুরা ধরবে। পরিণত হলে একটি গাছে ১০-১৫টি জাম্বুরা ধরবে। মে-জুন মাসে গাছে ফল ধরবে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে জাম্বুরা পেকে যাবে।

এই বিক্রেতা আরও বললেন, জাম্বুরার একেকটি চারার মূল্য ২০০ টাকা। এর চারা টবে রোপণের আগে মাটিতে জৈব সার মেশাতে হবে। টবের নিচে ফুটো করতে হবে যেন এর মধ্যে পানি জমতে না পারে। টবে পানি জমলে গাছ মরে যেতে পারে। জমিতে জাম্বুরার চারা রোপণের আগে গোড়ার মাটি উঁচু করতে হবে। মাঝেমধ্যে মাটি খুঁচিয়ে রাখতে হবে।

জাম্বুরার গাছগুলোর পাশে রাখা টবের গাছে ঝুলছিল দুই-তিনটি চালতা। চালতাগুলো পাকেনি, রং সবুজ। চালতা গাছেও ফল আসবে রোপণের দুই বছর পর। যত্ন নেওয়া হলে একটি চালতা গাছ ফল দেবে ২০-২৫ বছর—এমন দাবি দেলোয়ারের।

যত্ন করলে টবে কতবেলও পাওয়া যেতে পারে। বৃক্ষমেলায় এমন গাছ দেখা যাবে। দাম দেড় শ টাকা করে। ছবি: প্রথম আলো
যত্ন করলে টবে কতবেলও পাওয়া যেতে পারে। বৃক্ষমেলায় এমন গাছ দেখা যাবে। দাম দেড় শ টাকা করে। ছবি: প্রথম আলো

মেলায় পুষ্প কানন অ্যান্ড ইকবাল নার্সারিতে একটি টবে রয়েছে কতবেলের গাছ। গাছে কতবেল ঝুলছিল অনেকগুলো। তাই দাম হাঁকা হচ্ছে আট হাজার টাকা। তবে ধৈর্যশীল বৃক্ষপ্রেমীরা দেশি জাতের কতবেলের একটি চারা পাবেন দেড় শ টাকায়। একই স্টলে ডেউয়ার চারার মূল্য ২০০ টাকা। টক ও মিষ্টি দুই জাতের ডেউয়া ফলের চারা মিলবে এখানে। চারা লাগানোর আগে মাটিতে টিএসপি সার, পটাশ ও খইল মেশাতে হবে। অল্প পরিমাণে ইউরিয়াও দিতে হবে। এখানে এই ফলবতী কয়েকটি ডেউয়ার গাছও বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে, একেকটির দাম ১৫ হাজার টাকা করে। একইভাবে করমচা, কামরাঙা, আমড়া ও কমলা লেবুর চারা ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় পাওয়া যাবে। ফলভর্তি গাছও মিলবে, তবে হাজার টাকায়।

টবের এই গাছে রয়েছে ১০টির মতো জাম্বুরা। ছবি: প্রথম আলো
টবের এই গাছে রয়েছে ১০টির মতো জাম্বুরা। ছবি: প্রথম আলো

পুষ্প কানন নার্সারির বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরের শ্রীপুরে তাঁর বাগান। সেখানে চারা উৎপাদন করা হয়। ঢাকার বিভিন্ন নার্সারিতে তাঁরা এসব চারা সরবরাহ করেন।

দেশি ফল গাছ ও চারাই নয়; মেলায় ভেড়াকাটা মাল্টার গাছও বিক্রি হচ্ছে। সাত বছর আগে এই প্রজাতির মাল্টা থাইল্যান্ড থেকে এ দেশে আনা হয়। একটু বড় ড্রামে চারা লাগানো হলে ফল ভালো পাওয়া যায়। ফুল ধরে শীতকালে আর ফলের পূর্ণতা আসে বর্ষাকালে।

বৃক্ষমেলার প্রধান ফটকের সামনে নিজের প্রাইভেট কারে কামরাঙার গাছের টব রাখছিলেন মনির হোসেন। বললেন, শহরে মনের মতো দেশি ফল এখন পাওয়া যায় না। আমার বাড়িতে বড় ছাদ রয়েছে। তাই ফলের বাগান করার চেষ্টা করছি।

সুস্বাদু ডেউয়া ঝুলে আছে টবের গাছে। এমন একটি চারা মিলবে ২০০ টাকায়। ছবি: প্রথম আলো
সুস্বাদু ডেউয়া ঝুলে আছে টবের গাছে। এমন একটি চারা মিলবে ২০০ টাকায়। ছবি: প্রথম আলো

বৃক্ষমেলার তথ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা বন্য প্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, মেলায় ফুল গাছের চারার চেয়ে দর্শনার্থীদের ঝোঁক ফলের গাছ ও চারার দিকে। এখন রাজধানীতে বাড়ির ছাদে ফল ও সবজির বাগান করা হচ্ছে। তাই বৃক্ষমেলায় ফলের চারা কেনায় আগ্রহ বাড়ছে নগরবাসীর।