টিকার সংকট, জলাতঙ্কের আতঙ্ক কাটছে না শিগগিরই

জলাতঙ্কের আতঙ্ক
জলাতঙ্কের আতঙ্ক

সারা দেশে জলাতঙ্করোধী টিকার সংকট এখন চরমে। খুব শিগগির এ সংকট কাটার কোনো সম্ভাবনাও নেই। জানা গেছে, টিকা কেনার যে প্রক্রিয়া, সেটি শেষ হতে চার মাসের মতো সময় লেগে যেতে পারে।
এদিকে বিভিন্ন জেলায় কথা বলে জানা গেছে, সিভিল সার্জনরা বারবার তাগাদা দিয়েও পর্যাপ্ত জলাতঙ্করোধী টিকা পাচ্ছেন না।
ময়মনসিংহে সরকারিভাবে জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেওয়া হয় এসকে হাসপাতালে। এই হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চিকিত্সক আরিফুল বাশার প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, আগস্ট মাসে একটি টিকাও ছিল না। টিকার জন্য যে চাহিদা দেওয়া হচ্ছে, তার পুরোটা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরো জানান, তাঁর কেন্দ্রে দিনে ময়মনসিংহের আশপাশের এলাকা থেকে কুকুরে কামড়ানো রোগী আসে কমপক্ষে ৬০ জনের মতো।
রংপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুল হক বলেছেন, আজকে পর্যন্ত তাঁরা টিকা দিতে পেরেছেন। আরও ৫০০ টিকার চাহিদা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর তিন থেকে চার লাখ মানুষকে কুকুর কামড়ায়। মারা যায় দুই হাজারের ওপরে মানুষ। জলাতঙ্ক একটি প্রাণঘাতী রোগ। এ রোগে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগ টিকার সংকটের কথা স্বীকার করেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা ধারণাই করতে পারেননি যে এত তাড়াতাড়ি টিকা ফুরিয়ে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে ২০১১ সাল পর্যন্ত কুকুরে কামড়ালে ‘নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন’ দেওয়া হতো। এ টিকাটি দেওয়া হতো নাভির চারপাশে। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এই টিকা তৈরি করত। এই প্রক্রিয়ায় ভেড়ার মগজে ভাইরাস ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। কিছুদিন পর ভেড়াটি মারা গেলে তার মগজ থেকে তৈরি হতো টিকা। এর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশে এ টিকাটির ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে বাংলাদেশও এই টিকার ব্যবহার বন্ধ করে দেয় ২০১১ সাল থেকে। শুরু হয় অত্যাধুনিক টিকা দেওয়ার কর্মসূচি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, মানুষ আগে টিকা নিতে চাইত না। সে কারণে গত বছর এক লাখ ৭০ হাজার টিকা কেনা হয়। সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাড়ানোর কারণে মানুষ ভ্যাকসিন নিতে শুরু করে। সরকারের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে এই টিকা সরবরাহ করা হয়। হঠাত্ আগস্টে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার জানায়, অল্প কিছু টিকা আছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আবেদন জানালে তারা ১০ হাজার টিকা দিতে রাজি হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে হলে এখনো কমপক্ষে চার মাস সময় লাগবে।

এদিকে রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র প্রথম আলো ডটকমকে বলেছে, বাংলাদেশে রেনাটা জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন তৈরি করে। এর আগে জরুরি প্রয়োজনে রেনাটা ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারে—এমন একটি চুক্তি হয়েছিল সরকার ও রেনাটার মধ্যে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এই চুক্তি নবায়নের সুযোগ আছে।

তবে আজকে পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। স্বাস্থ্য সচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, চুক্তি নবায়নের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। কেনাকাটার প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে।